শুরু হয়ে গিয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। শোনা যাচ্ছে এই অধিবেশনেই সংসদে পেশ হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আশা-আশঙ্কার দোলায় দুলছে হিন্দু বাঙালীর মন। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা CAB ঠিক কি তা অনেকে জানেন, অনেকে জানেন না। প্রচারিত হচ্ছে যে CAB নাকি হিন্দু বাঙালীকে দেবে নাগরিকত্বের রক্ষাকবচ। এবং সেক্ষেত্রে এন আর সি’র সময় আর কোনো সমস্যা হবে না হিন্দু বাঙালীর। এমত বিবিধ আলোচনা সম্যক বুঝতে পারছেন না অনেকেই। এন আর সি শব্দটি এখন একটি পরিচিত শব্দ হলেও তার প্রকৃত অর্থ সম্বন্ধে সকলে সম্যক অবগত কি না, তা সংশয়াতীত নয়। পশ্চিমবঙ্গে সাড়ম্বর প্রচার চলছে যে এন আর সি’র প্রকৃত উদ্দেশ্য হল, বাঙালীকে উৎখাত করা ও বাঙালীর অধিকার কেড়ে নেওয়া। কলকাতার রাজপথে যত্রতত্র দ্রষ্টব্য এন আর সি বিরোধী পোষ্টার, এন আর সি’র প্রতিবাদে পদযাত্রা ও জনসভার ডাক। যদিও এন আর সি অর্থাৎ ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস্ বা ভারতের নাগরিকবৃন্দের একটি পঞ্জী বা রেজিস্টার যদি তৈরী হয়ই, তবে তাতে আপত্তিকর কি থাকতে পারে, এমন প্রশ্নও অবশ্য কেউ কেউ তুলেছেন, কিন্তু তারা সংখ্যায় প্রচুর নন। আসাম এন আর সি’র চূড়ান্ত তালিকায় ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালীর বাদ পড়ার ঘটনা তাদের গলার স্বরকে এন আর সি বিরোধী প্রচারের স্বরের কিঞ্চিৎ নীচে ফেলে দিয়েছে।
আসাম এন আর সি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন মোট ১৯ লক্ষ মানুষ যার মধ্যে ১২ লক্ষই হিন্দু বাঙালী এবং তাতেই আহত হয়েছে হিন্দু বাঙালীর আবেগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে অতিরিক্ত গতি লাভ করেছে এন আর সি বিরোধী প্রচার, কারণ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি মূলতঃ হিন্দু বাঙালীর। বাকি ভারতবর্ষে যদি এন আর সি হয়, তবে তার নীতি ও পদ্ধতি আসাম এন আর সি’র নীতি ও পদ্ধতি অপেক্ষা ভিন্নতর হবে এবং আসাম এন আর সি’র ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়েই বাকি দেশে এন আর সি’র বিষয়ে এগোনো হবে, এমন বিবৃতি বার বার দিয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ্। তিনি এমনও বলেছেন যে দেশব্যাপী এন আর সি’র আগে পাশ হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যার দ্বারা সুনিশ্চিত করা হবে ভারতের শরণার্থীদের সুরক্ষা। কোনো হিন্দুকে এন আর সি’র কারণে ভারতবর্ষ ছেড়ে যেতে হবে না, বলেছেন সরসঙ্ঘচালক শ্রী মোহন’জী ভাগবতও। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বাঙালীর উদ্বেগ সম্যক দূর হচ্ছে না এবং তার যথার্থ কারণও আছে।
আসাম এন আর সি’র আগে সর্বভারতীয় বিজেপি সর্বান্তকরণে সমর্থন করেছিল এন আর সি প্রোগ্রামটিকে। কেবল আসামের রাজ্য বিজেপি নয়, সর্বভারতীয় বিজেপির হাইপোথিসিসও ছিল এইরকম যে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পার হয়ে যেসব মানুষ অবৈধভাবে আসামে অনুপ্রবেশ করে, তার সিংহভাগই হল মুসলমান বাংলাদেশী। ফলে এন আর সি হলে বাদ পড়বে মূলতঃ মুসলমান। এমন প্রকল্প বা হাইপোথিসিস নিয়ে প্রবল উৎসাহে এন আর সি’র সপক্ষে সর্বাত্মক প্রচার করেছিল বিজেপি এবং আসামে বসবাসকারী বিরাট সংখ্যক হিন্দু বাঙালী ঢেলে ভোটও দিয়েছিল বিজেপিকে। বিজেপি প্রকৃতই আশা করেছিল যে আসাম এন আর সি’র চূড়ান্ত তালিকায় যথেষ্ট সংখ্যায় বাদ পড়বে আসামে বসবাসকারী মুসলমানদের নাম এবং তার কৃতিত্ব যাবে বিজেপির ঝুলিতে। কিন্তু আসাম এন আর সি’র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর যখন দেখা গেল যে তা থেকে বাদ পড়েছে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালীসহ মোট ১৪ লক্ষ হিন্দু আর মাত্র পাঁচ লক্ষ মুসলমান, তখন তার সম্যক অকৃতিত্ব ও দোষও এসে পড়ল বিজেপির ঘাড়েই। সেই কারণেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার বার আশ্বস্ত করা সত্ত্বেও উদ্বেগ দূর হচ্ছে না হিন্দু বাঙালীর। যতবার শ্রী অমিত শাহ্ বলছেন অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে এদেশের ওপর থেকে তাদের ভার কমানোর চেষ্টা করা হবে, ততবার হিন্দু বাঙালীর মনে হচ্ছে, অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে তাদেরকেই। কারণ আসাম এন আর সি’র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালীই, মুসলমান বাংলাদেশী নয়। তাই আসাম এন আর সি যে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে সে বিষয়ে সংশয় নেই। সেই রাজনৈতিক অস্বস্তি দূর করতে হলে শীতকালীন অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের যে খসড়াটি সংসদে পেশ হবে বলে শোনা যাচ্ছে, তাতে ভারতবর্ষে হিন্দু বাঙালীর পরিচয়-সঙ্কট চিরতরে দূর করার দিশা থাকা আবশ্যক।
আসাম এন আর সি’কে সমর্থন না জানিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলেরই অন্য কিছু করণীয় ছিল না কারণ আসামে এন আর সি চেয়েছিলেন রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে আসামের প্রায় সকল মানুষ। যে কম্যুনিস্টরা পশ্চিমবঙ্গে এন আর সি’র বিরোধিতা করছে, সেই কম্যুনিস্টরাই এন আর সি’র দাবী নিয়ে পথে নেমেছিল আসামে। এর কারণ হল, আসাম এন আর সি ছিল একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এটি হয়েছে আসাম অ্যাকর্ডের অধীনে। আসাম অ্যাকর্ড ভারতের সংবিধানের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সুবিধাবাদী ধারা যে ধারাটিকে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন রাজীব গান্ধী, ১৯৮৫ সালে। দ্বিতীয়তঃ, আসাম অ্যাকর্ড অনুযায়ী আসামের এন আর সি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ও তত্ত্বাবধানে। অসমীয়াদের আঞ্চলিকতার রাজনীতির আগুনকে উস্কে দিয়ে আসাম অ্যাকর্ডের মত একটি প্রাদেশিকতাদোষে দুষ্ট ধারাকে রাজীব গান্ধী যখন ভারতীয় সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, ভুলটি হয়েছিল তখনই। এর ফলে আন্তঃরাজ্য বিভেদের রাজনীতির পথ প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল। সহজ ভাষায় বললে আসাম অ্যাকর্ডের ছয় নম্বর ধারার প্রতিপাদ্য হল, আসামের ওপর অধিকার কেবলমাত্র আসামের ভূমিপুত্রদের। এমন প্রতিপাদ্য ভারতের সংবিধানের মূল স্পিরিটেরই বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও সেই অ্যাকর্ডকে ভারতের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করার ভুলটি করা হয়েছিল। সেই অ্যাকর্ড অনুযায়ী হওয়া এন আর সি’র চূড়ান্ত তালিকা বর্তমানে উস্কে দিয়েছে আন্তঃরাজ্য প্রাদেশিকতার আগুন। ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষও অসমীয়াদের অনুসরণ করে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধুয়ো জোরালোভাবে তুলতে আরম্ভ করেছে। বর্তমানে তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গও কেবলমাত্র বাঙালীদেরই। এই বাংলা ও বাঙালীপন্থীদের মধ্যেও রয়েছে নানা গোষ্ঠী ও মতভেদ যেটি সীমান্তবর্তী রাজ্যটির নিরাপত্তাকে নিশ্চিতভাবে বিঘ্নিত করছে। প্রাদেশিকতার রাজনীতির এই চেইন রিঅ্যাকশনকে থামাতে গেলে গোটা ভারতবর্ষের সমস্ত নাগরিককে বাঁধতে হবে এমন একটি কোনো কমন ফ্যাক্টরে যা প্রাদেশিকতার আবেদনকে অতিক্রম করে যেতে সক্ষম হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে পশ্চিমবঙ্গের কিছু মানুষ যখন বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলছে, তখন প্রত্যাশিতভাবেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে বহু ছদ্মবেশী ভারতবিরোধীও। তারা বাঙালী পরিচয়টিকে সংজ্ঞায়িত করতে চাইছে কেবলমাত্র বাংলা ভাষা দিয়ে। বাংলা যাদের মাতৃভাষা, তারাই নাকি বাঙালী। অথচ বাস্তবে বাঙালীর পরিচয় কেবল ভাষাগতভাবে হওয়া সম্ভব নয়।
বাংলা ভাষা বাঙালী মুসলমানেরও নিজ ভাষা। অথচ বাংলাভাষী মুসলমান আর হিন্দু বাঙালীর মধ্যে সমাজ-সাংস্কৃতিক ব্যবধান প্রায় অলঙ্ঘ্য। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিয়মিত যে ইসলামী অত্যাচার চলে, তারপর হিন্দু বাঙালীর পক্ষে বাংলাভাষী মুসলমানের সঙ্গে একাত্ম হতে চাওয়া এবং পারা বাস্তবে অসম্ভব এবং অনুচিত। আত্মরক্ষার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। এবং তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনানুগ দূরদর্শিতা আবশ্যক। একটি জাতির পরিচয় কেবল ভাষায় নয়, তার সংস্কৃতিতে, সমাজচেতনায়, আচারধর্মে। সেই সূত্রে হিন্দু বাঙালীর সঙ্গে বাংলাভাষী মুসলমানের সাদৃশ্য নেই বললেই চলে। উপরন্তু দেশভাগের সময় অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশ ভৌগোলিকভাবেও ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে। অতএব পুনরায় কেবলমাত্র মাতৃভাষা বাংলা বলে বাংলাভাষী মুসলমানের সঙ্গে একাসনে বসতে এবং একই নাগরিকত্বের মানদণ্ডে তাদের সঙ্গে তুলনীয় হতে হিন্দু বাঙালী চাইবে কেন? পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকপঞ্জী তৈরি হলে বাংলাভাষী মুসলমানের তথ্যাদি পরীক্ষনীয় হোক্, কিন্তু সেই একই পরীক্ষায় হিন্দু বাঙালীকেও বসতে বাধ্য করা অনুচিত ও অন্যায়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটিকে দেখতে চেয়েছিলেন হিন্দু বাঙালীর নিশ্চিন্ত বাসস্থান হিসেবে। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালী ও বাংলাভাষী মুসলমান, উভয়কেই যদি নাগরিকত্বের একই প্রমাণ দাখিল করতে হয় এবং একই নাগরিক তালিকার অন্তর্ভুক্ত হতে হয়, তবে তাঁর সেই প্রয়াস ব্যর্থ হবে তৎক্ষণাৎ। বরং পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের যে কোনো স্থানে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি হিন্দু বাঙালী হলেই তিনি ভারতের নাগরিক বা নাগরিকত্ব লাভের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন, এমনই কাম্য। তাই সংসদের এই শীতকালীন অধিবেশনে যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পেশ হবে, তাতে ভারতবর্ষে প্রকৃত বাঙালীর অর্থাৎ হিন্দু বাঙালীর পরিচয় সঙ্কট দূর করার দিশা থাকা প্রয়োজন। আসাম এন আর সি’র চূড়ান্ত তালিকা সবচেয়ে বেশি সংকটে ফেলেছে হিন্দু বাঙালীকেই। ফলে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে তার দ্বারা হিন্দু বাঙালীর অস্তিত্বসংকট চিরতরে দূর হওয়া প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গ যেহেতু একটি সীমান্তবর্তী রাজ্য, ফলে তেমন সঙ্কটকাল উপস্থিত হলে, ইতিহাস সাক্ষী, রক্ত সবচেয়ে বেশি ঝরবে পশ্চিমবঙ্গেরই। আর একটি ডায়রেক্ট অ্যাকশন ডে বা আবার নোয়াখালী আমাদের কাম্য হতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষের নানাভাষাভাষী অমুসলমান মানুষের মধ্যে হিন্দু বাঙালীই একমাত্র সেই জাতি, যাদের নাম বা ধর্মভিত্তিক পরিচয় পাওয়ামাত্রই সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় যে তার নাগরিকত্বটি ভারতেরই। এমন সন্দেহজনক নাগরিক পরিচিতির ভার হিন্দু বাঙালীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ঐতিহাসিকভাবে তাদের বিভ্রান্ত করে এবং হিন্দু বাঙালীর নিতান্ত অনিচ্ছায়। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের যে খসড়া সংসদে পেশ হবে, তা যদি অজস্র ভারতীয়ের, বিশেষতঃ হিন্দু বাঙালীর নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সঙ্কট ত্রুটিহীনভাবে দূর করতে সক্ষম হয়, তাহলে তা আসাম এন আর সি’র রাজনৈতিক ড্যামেজ কন্ট্রোলে সহায়তা করবে।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ১৯৩৫ সালের গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্টে ভারতবর্ষের যে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, বর্তমান ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সেই সম্পূর্ণ অবিভক্ত ভারতবর্ষের যে কোনো অমুসলমান অধিবাসী (অমুসলমান, কারণ মুসলমান অধিবাসীরা ইতিমধ্যেই তাঁদের জন্য আলাদা ইসলামিক রাষ্ট্র ভাগ করে নিয়েছেন) অথবা তাঁদের উত্তরসূরী যে কেউ যদি বর্তমানে ভারতের অধিবাসী হন, তবে নিঃসংশয়ে তাঁদেরকে জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। অর্থাৎ সিটিজেনশিপ বাই ন্যাচারালাইজেশন নয়, এঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া উচিত সিটিজেনশিপ বাই বার্থ। এক্ষেত্রে ইতিপূর্বে তাঁরা কখনও পাকিস্তান বা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন কিনা সে প্রশ্ন অবান্তর। শুধু এইটুকু নিশ্চিত করলেই হবে যে
—তাঁরা অমুসলমান,
—তাঁরা বা তাঁদের পূর্বপুরুষ অবিভক্ত ভারতবর্ষের অধিবাসী
—বর্তমানে তাঁরা ভারতবর্ষের অধিবাসী এবং
—তাঁরা বর্তমানে পাকিস্তান বা বাংলাদেশের বা অন্য কোনো দেশের নাগরিক নন।
তাঁদের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করার জন্য এই মর্মে আপাততঃ তাঁদের কাছ থেকে কেবলমাত্র একটি হলফনামা চাওয়া যেতে পারে এবং যদি পরবর্তীকালে কখনও প্রমাণিত হয় যে সেই হলফনামা মিথ্যা, তাহলে তাঁদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এবং সে প্রমাণের দায় থাকা উচিত ভারত সরকারেরই। অর্থাৎ যদি ভবিষ্যতে গোটা ভারতবর্ষে এন আর সি করা হয়, তাহলে অন্ততঃ যে কোনো হিন্দু বাঙালীর জন্য এন আর সিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে এই মর্মে একটি হলফনামাই যথেষ্ট হওয়া উচিত। আমার বিশ্বাস, দেশভাগের সময় বা তার আগে বা পরে পূর্ববাংলা, পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের থেকে আগত হিন্দু বাঙালী শরণার্থী বা তাঁদের উত্তরপুরুষেরা তো বটেই, এমনকি যেসব হিন্দু বাঙালী বা যাঁদের পূর্বপুরুষ বরাবরই বর্তমান ভারতবর্ষের সীমানার অভ্যন্তরের অধিবাসী অর্থাৎ বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই যাঁদের নেই বা কোনোদিন ছিল না, তাঁদেরও এরকম একটি হলফনামা দিতে আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু সংসদে পেশ হতে চলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের যে খসড়া, তা এতখানি সহজ, এতটা অকপট নয়, বরং কিছু আলাদা।
১৯৫৫’র নাগরিকত্ব আইনের একটি যথাযথ ও উচিত সংশোধনের দ্বারা বর্তমান ভারতের হিন্দু বাঙালীর নাগরিক নিরাপত্তা যদি প্রকৃতই সুনিশ্চিত করা যায়, তাহলেই এন আর সি বিরোধী যে অপপ্রচারগুলি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে চলছে, সেগুলিকে অকেজো করে দেওয়া যাবে। দেশজুড়ে এন আর সি শুরু করার আগে গত বাহাত্তর বছর ধরে চলা হিন্দু বাঙালীর নাগরিকত্ব সংক্রান্ত উদ্বেগের সুরাহা করা ভারতসরকারের জাতীয় কর্তব্য।