রবীন্দ্র সরোবরে ছট নিয়েও ধাক্কা খেল রাজ্য, গ্রিন ট্রাইবুনালের রায় বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও সুরাহা হল না। রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করা নিয়ে মামলা রুজু হয়েছিল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বা পরিবেশ আদালতে। অনুমতি না মেলায় কেএমডিএ আবেদন করেছিল সুপ্রিম কোর্টে। শেষ পর্যন্ত গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়কেই বহাল রাখল সুপ্রিমকোর্টও। রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করা যাবে না। সুভাষ সরোবরেও একই নিষেধাজ্ঞা।

আজ বৃহস্পতিবার এই প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আদালতের রায় সব সময়ের জন্য শিরোধার্য। সেই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর বক্তব্য জানিয়েছেন। তিনি মানুষের কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা যেন ভিড় না করেন। কোভিডের সমস্ত প্রোটোকল মানেন।

গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে গতবারই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রবীন্দ্র সরোবরের ছটপুজো। তা নিয়ে কম হট্টগোল হয়নি! তার পর এবছর সেপ্টেম্বর মাসে পরিবেশ আদালতের কাছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি তথা কেএমডিএ আবেদন করেছিল, শর্ত সাপেক্ষে ছটপুজো করতে দেওয়া হোক লেকে। সেই আর্জি খারিজ করে দেয় গ্রিন ট্রাইবুনাল। জানিয়ে দেয়, কোনও শর্তেই লেকে ছটপুজোয় অনুমতি দেওয়া যাবে না।

এর পরেই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের প্রধান তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছিলেন, “ছটপুজোয় বহু মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ রয়েছে। তাই আমরা গ্রিন ট্রাইবুনালের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম যাতে শর্ত সাপেক্ষে ছটপুজোয় অনুমতি দেওয়া হয়। এবার সুপ্রিম কোর্টে যাব।”

তবে শেষরক্ষা হল না। সেখানেও পিছু হটতে হল রাজ্য সরকারকে। প্রসঙ্গত, দিন দশেক আগে কলকাতা হাইকোর্টেও ছটপুজো নিয়ে রীতিমতো তুলোধনা করা হয় রাজ্যকে। একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে  বিচারপতি রাজ্যকে প্রশ্ন করেন, “কলকাতায় ৩৮০টি ঘাট আছে সেখানেই ছট পুজোয় মানুষ আসেন, এ ছাড়া শিলিগুড়ি, দুর্গাপুরেও ছটপুজো হয়। কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? যে প্রসেশন বের হয় সেখানে ভয়ংকর ডিজে বাজে, বাজি ফাটে। এগুলোর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে রাজ্যের পক্ষ থেকে?”

রাজ্য সরকারের আইনজীবী এর জবাবে জানান, সকলে মাস্ক পরেন যাতে সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেই পাল্টা প্রশ্ন করেন বিচারপতf, “এতেই কি হয়ে যাবে? কী ধরনের প্রচার চালিয়েছে রাজ্য?” রাজ্যের তরফে জবাব আসে, “কেউ যদি বেরিয়ে যায়, কীভাবে আমরা সামলাব?”

এর পরেই রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি। সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যকে কড়া ভাষায় ভর্তসনা করে বলেন, “তার মানে আপনাদের কোনও পরিকল্পনা নেই? জীবন যেখানে স্বাভাবিক নয়, সেখানে রাজ্য কী প্ল্যান করছে? শহরে অনেক পকেট আছে।  যেমন জুট বেল্ট। যেটা নদীর পাশেই।  আপনাকে সেগুলো দেখে কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। সংখ্যা নির্দিষ্ট কর‍তে হবে। প্রচার চালাতে হবে। বলতে হবে যে অতিমারীতে এটা চালানো যাবে না। নির্দিষ্ট সংখ্যা না বললে ম্যানেজ করতে পারবেন না।”

এর পরে শেষ আশা ছিল সুপ্রিম কোর্ট, সেখানেও মিলল না অনুমতি।

প্রসঙ্গত, গতবার ছটপুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিজেপি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, সরকারের অপদার্থতার জন্যই পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকের মতে, হিন্দিভাষীদের কাছে যাতে ভুল বার্তা না যায় সে কারণেই কেএমডি এই পদক্ষেপ করে। কিন্তু গ্রিন ট্রাইবুনালের পরে সুপ্রিম কোর্টেও সেই ধাক্কাই খেতে হল রাজ্যকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.