কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা বর্তমানে এডিজি (সিআইডি) রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে অনুমতি চাইল সিবিআই।
কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির অভিযোগ, রাজীব কুমারের সঙ্গে যখনই সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা কথা বলেছেন, তিনি কখনওই সত্যি কথা বলেননি। তাঁর বেশির ভাগ জবাবের উদ্দেশ্যই ছিল আসল বিষয় এড়িয়ে যাওয়া, এবং তিনি (চিটফান্ড তদন্ত নিয়ে) কখনওই তাঁর জ্ঞাতার্থে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তদন্তকারীদের জানাননি। বরং তাঁর হাবভাব ও শরীরীভাষায় বারবারই সন্দেহ হয়েছে, তিনি কাউকে আড়াল করতে চাইছেন।
চিটফান্ড মামলায় সর্বেশষ শুনানির দিন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চের সামনে একটি স্টেটাস রিপোর্ট পেশ করেছিল সিবিআই। যা পড়ে তখন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, রাজীব কুমার সম্পর্কে আপনারা যে অভিযোগ করেছেন, তা তো খুবই গুরুতর। এর পর তো আর চোখ বুজে থাকা যায় না। তার পরেই আদালত জানিয়েছিল, সিবিআই স্টেটাস রিপোর্টের মাধ্যমে যা চেয়েছে তা যেন হলফনামা আকারে আদালতে পেশ করে। তার পর তা দেখে রাজ্য এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের হলফনামা পেশ করবে।
সর্বোচ্চ আদালতের ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টে নতুন আবেদন পেশ করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সূত্রে খবর, চিটফান্ড তদন্তের স্বার্থে রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করে তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে সিবিআই।
এর আগে চিটফান্ড কাণ্ডে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই টিম তাঁর বাড়িতে গেলে বাধা দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। সিবিআই কর্তাদের হেনস্থাও করা হয়েছিল। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই রাজীব কুমারের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। তার পর প্রতিবাদ জানাতে ধর্মতলায় ধর্ণায় বসেছিলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট তখন জানিয়েছিল, সিবিআইয়ের সামনে অবশ্যই হাজিরা দিতে হবে রাজীব কুমারকে। তবে তাঁকে গ্রেফতার করা বা তাঁর বিরুদ্ধে সে ধরনের কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। আদালত যাতে সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে রাজীব কুমারকে গ্রেফতারের অনুমতি দেয়, সেজন্যই নতুন আবেদন জানিয়েছে সিবিআই।
সিবিআই আগেই অভিযোগ করেছিল, চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তের নামে তথ্য প্রমাণ লোপাট করেছিলেন রাজীব কুমার। রাজ্য সরকার গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিভ টিমের (এসআইটি) প্রধান ছিলেন রাজীব। সিবিআই আদালতে নতুন করে দাবি করেছে, চিটফান্ড-দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পরেও চুপ করে ছিলেন রাজ্যের পুলিশ কর্তারা। আরও দাবি, রাজীব কুমার হাত গুটিয়ে থেকে বা অন্যভাবে সারদা গোষ্ঠীকে বাজার থেকে তার পরে আরও (২০১২-১৩ আর্থিক বছরে) ৮০৫.৭৭ কোটি টাকা তোলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আবার ২০১২ থেকে ১৪ সালের মধ্যে রোজভ্যালি গোষ্ঠী বাজার থেকে ৬৮৬৫.৮৫ কোটি টাকা পাঠিয়েছিল।
সিবিআইয়ের এই আবেদনের ভিত্তিতে আগামী ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা। সর্বোচ্চ আদালত কী নির্দেশ দেয় এখন সেটাই দেখার।