পরিবহণ মন্ত্রীর আবেদন ছিল, “মানুষের স্বার্থে আপনারা বাস নামান। সরকার আপনাদের বিষয়টি দেখছে।” বেসরকারি বাসের বিষয় বলতে গত ২ বছর ধরে চলতে থাকা একটাই ইস্যু। বাড়াতে হবে বাসের ভাড়া। তবে বিধি নিষেধ পর্ব ক্ষেত্রে বাস চালানোর অনুমতি মিললেও প্রথম দিনে সে অর্থে রাস্তায় দেখা মিলল না বেসরকারি বাসের। কিছু বাস নিজেদের মতো বর্ধিত ভাড়ায় বাস চালালেও তাতে আবার যাত্রী ওঠেনি সেভাবে।
তবে বাস মালিকরা বলছেন, ভিড় নেই আজ কারণ রাজ্য সরকারের ছুটি। দ্বিতীয় কারণ ট্রেন পরিষেবা এখনও চালু হয়নি। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “৫০% যাত্রী নিয়ে বাস চালানো মানে তো এই নয় যে বাসে ৫০% ডিজেল লাগবে। জ্বালানির দাম প্রতিদিন বাড়ছে। এই অবস্থায় এত কম জ্বালানিতে বাস চালাব কি করে? তাই অধিকাংশ বাস মালিক রাস্তায় বাস নামাতে পারলেন না।”
বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে তাই রাজ্যের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল বজায় রাখল মালিক সংগঠনগুলি। বেসরকারি বাসের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্যের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলি। বাসের ভাড়া না বাড়ালে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাস মালিকদের সংগঠন। প্রসঙ্গত, গত ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট কলকাতার রাজপথে নেমে ছিল। কারন কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে ক্রমাগত ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি করছে, তার প্রতিবাদে ও বাস ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সংগঠনের দাবি তিন বছর হতে চলল, দুর্ভাগ্যবশত আজ অবধি একই ভাবে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। গত বছরের মার্চ মাসে কোভিড ১৯ নিয়ে চালু হয় লকডাউন। তখন থেকে আজ অবধি বেসরকারি বাস ঠিক মতো চলাচল করছে না।
সংগঠনের নেতা রাহুল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমাদের এই শিল্পে এমন অনেক খরচ আছে যা রাস্তায় বাস না চললেও দিতে হয়, আবার চললেও দিতে হয়,যেমন ব্যাঙ্কের ইএমআই, বিমা ,রাস্তার কর ,পারমিট ফিজ। গত বছরের মার্চ মাস থেকে আমরা একাধিক বার কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি, কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি,রাজ্য সরকার কিছুটা সাহায্য করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ হতে কোনও সাহায্য পাইনি। সার্বিক বিষয়টি তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রীকে দফায় দফায় জানিয়েছিলাম।”
এখন ডিজেলের মূল্য ৯০ টাকা ছুঁই ছুঁই। তাই এই মুহূর্তে লকডাউন মিটলে বাস চললে ভাড়া বাড়ানো হোক, এমনটাই চাইছেন তাঁরা। একই সাথে তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ডিজেলের উপর জিএসটি বসাতে হবে। ব্যাঙ্ক ইএমআই, বিমা, টোল ট্যাক্স অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে মকুব করতে হবে।
বাস শিল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, এক মাত্র ১৯৭৫ সালে ১০ পয়সা ভাড়া থেকে ২০ পয়সা ভাড়া হয়েছিলো তারপর হতে যখন যেমন মানে দ্বিগুণ ভাড়া এই রাজ্যে কোনও দিন হয়নি। বাস শ্রমিকদের দাবি বাজারের সাথে সমতা রেখে এবং অন্য রাজ্যের সাথে সমতা রেখে ভাড়া বৃদ্ধি করা হোক। ১৯৯০ সাল হতে এই রাজ্যে যতবার ভাড়া বৃদ্ধির জন্য কমিটি গঠন হয়েছে তার কোনও রিপোর্ট নেই। এমনকি এক সময় প্রবুদ্ধনাথ রায়ের রিপোর্ট মানা হয়নি।
বাস শ্রমিকদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী অনেক মানবিক। ওঁর কাছে আমাদের আবেদন বিজ্ঞানভিত্তিক ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। কোভিডের জন্য যে বিশাল লোকসানের বোঝা বাসমালিকদের উপর চেপেছে , তার থেকে রেহাই পেতে হলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে সহানুভূতির হাত বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যেই অনেক বাসমালিক হারিয়ে গিয়েছেন। বেসরকারি পরিবহণ কার্যত কোমায় চলে গেছে।
এছাড়া বাস মালিকদের দাবি, আপনারা জানেন দূষ কে সামনে রেখে কোলকাতার মহামান্য আদালত গত ২০০৯ সালে রায় দিয়েছিল ১৫ বছরের বেশি বয়সের বাস কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় চলতে পারবে না, একটি বাস বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২৮০/২৯০ দিনের বেশি চলে না, সেখানে এখন কোভিড ১৯ এর জন্য, গত বছর থেকে বাস চলছে না। ২০২০ সাল থেকে যত দিন না বাস চলে , বয়সের দিক থেকে বাতিলের সময় এই সময় টা বাড়িয়ে দিতে হবে।জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের দাবি এই মুহূর্তে বাস শিল্প কে বাঁচাতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করছি। যতদিন বিজ্ঞানভিত্তিক বাসভাড়া ঘোষণা না হয়, এবং যে দাবি গুলো আমরা করেছি তা পরিপূরণ না হলে লোকসানের বোঝা আরো বাড়বে। রাজ্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে বাস চালায়।জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, অবিলম্বে বিজ্ঞানভিত্তিক বাস ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে।কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যাঙ্ক ইএমআই, বিমা, টোল ট্যাক্স অবিলম্বে মকুব করতে হবে। ১৫ বছরের বয়সের ভিত্তিতে বছরের যে বাসগুলো বাতিল হবে তার সময়সীমা বাড়াতে হবে কোভিডের জন্য।অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাস মালিক ও শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য করতে হবে।