মেরে কেটে দেড় ঘণ্টা। দুপুর একটা থেকে আড়াইটে। এর মধ্যেই শেষ হয়ে গেল বিজেপি-র লালবাজার অভিযান। যা দেখে অনেকেই বলছেন। যতটা গর্জন হয়েছিল, ততটা বর্ষণ হল না।
কী ঘটল এই দেড় ঘণ্টায়?
দুপুর একটা: তখনও মূল মিছিল শুরু হয়নি ওয়েলিংটন স্কোয়ার থেকে। তিনজন বিজেপি-র মহিলা মোর্চার কর্মী হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে আচমকা পৌঁছে যান লালবাজারের সদর দরজার সামনে। রাস্তায় বসে পড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। গ্রেফতার করা হয় তাঁদের।
দুপুর একটা কুড়ি: একে একে সব নেতারা ওয়েলিংটনের সামনে উপস্থিত হলে মিছিল শুরু করে বিজেপি।
দুপুর পৌনে দুটো: বিবি গাঙ্গুলী রোডের মুখে আসতেই বিজেপি-র মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। একটি ব্যারিকেড ভাঙে বিজেপি কর্মীরা। তারপরই পুলিশ জল কামান চালাতে শুরু করে। ছোড়া হয় টিয়ার গ্যাস। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জনতা। অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও।
দুপুর সওয়া দুটো: গোটা সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ তখন বিজেপি-র দখলে। ম্যাটাডোরে মাইক বেঁধে পুলিশ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ভাষণ দিতে শুরু করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহারা।
দুপুর দুটো পঁয়ত্রিশ: বিজেপি রাজ্য দফতরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন আজকের মতো আন্দোলন এখানেই স্থগিত। তাঁর দাবি, পুলিশ ঘোষণা করেছে, ৫০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করে মুক্তি দেওয়া হল। তারপর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নেতৃত্ব বসে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরি করবে।
অর্থাৎ দুপুর একটা থেকে দুটো পঁয়ত্রিশ। এর মধ্যেই শেষ হয়ে গেল বিজেপি-র অভিযান। পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা শুধু বিজেপি-র বলে নয়, সমস্ত বিরোধী আন্দোলনেরই বাংলায় একই অবস্থা। সেই জেদ, সেই রণংদেহি মেজাজটা নেই। তাঁদের মতে, নেতৃত্বর মধ্যে সেই মনোভাব নেই বলেই কর্মীদের মধ্যেও তা ছড়াচ্ছে না। ফলে একবার জলকামান আর চারটে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটলেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে জমায়েত। পরে আবার সেই জমায়েত করে নতুন করে মিছিল সাজানোর পরিকল্পনা বা ইচ্ছে কোনওটাই যেন নেই।
এর আগেও বিজেপি-র লালবাজার অভিযানে একই জিনিস দেখা গিয়েছিল। বামেদের নবান্ন অভিযানেও দেখা গিয়েছিল এই ছবি। একটু ধাক্কাধাক্কি, একটু জল কামান, দু’চারটে টিয়ারগ্যাস তারপরই নেতৃত্বের ভাষণ দিয়ে কর্মসূচি শেষ।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মীদের বিরোধী আন্দোলনের মেজাজেও আমূল বদল এসে গিয়েছে। এই বাংলাতেই অতীতে ৫৯ এবং ৬৬-র খাদ্য আন্দোলন হয়েছিল। ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ আন্দোলনের ইতিহাসও বাংলার রাজনীতিতে জ্বলজ্বল করছে। নয়ের দশকে যুব কংগ্রেসের সভাপতি থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একুশে জুলাইয়ের আন্দোলন এবং তাতে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন কর্মীর মৃত্যু- এ সবই অতীত। বিরোধী আন্দোলনের ধরন দেখে অনেকেই বলছেন, মানসিকতা বদলেছে বলেই আন্দোলনের স্টাইল বদলে গিয়েছে। এখনকার বাংলায় ঝুঁকির আন্দোলন নেই।