বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত দখলে বাংলার তৃণমূলকেও পিছনে ফেলে দিল ত্রিপুরার বিজেপি। উত্তরপূর্বের ছোট্ট রাজ্যটির ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ২৭ জুলাই। মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর স্ক্রুটিনি করে যা হিসেব বেরিয়েছে, তাতে গেরুয়া শিবির ৮৫ শতাংশ আসন জিতে গিয়েছে বিনা লড়াইয়ে। সিপিএম, কংগ্রেস-সহ রাজ্যের বিরোধী দলগুলি সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। পাল্টা বিজেপির বক্তব্য, ওদের প্রার্থী দেওয়ার মতো শক্তিই নেই।
ত্রিপুরার নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬১১১টি আসনের মধ্যে ৫২৭৮টি আসনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে বিজেপি। পঞ্চায়েত সমিতির ৪১৯ টির মধ্যে ৩৩৭টিই গেরুয়া শিবিরের দখলে। আর জেলাপরিষদের ১১৬টি আসনের মধ্যে ৩৭টি ইতিমধ্যেই বিজেপি জিতে নিয়েছে। অর্থাৎ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মোট ৬৬৪৬টি আসনের মধ্যে ৫৬৫২টি আসন বিজেপি আগেই জিতে গিয়েছে। শতাংশের বিচারে যা ৮৫ শতাংশ।
সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ দ্য ওয়াল-কে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল যা করেছে, ত্রিপুরার বিজেপি সেটাকে আরও ভাল ভাবে করেছে। সরকারে আসার পর থেকেই এই কাজ করছে তারা। সমস্ত বিরোধী দলকে কার্যত নিষিদ্ধ করতে চাইছে।” গত বছর এ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে প্রায় ৩৪ শতাংশ আসন বিনা ভোটে জিতে নিয়েছিল তৃণমূল। সেই সময়ে বাংলার বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, শাসকদল গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। যদিও ত্রিপুরার এক বিজেপি নেতা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম ভোট হোক। কিন্তু বিরোধীরা প্রার্থী না দিতে পারলে আমরা কী করতে পারি?”
লোকসভার দুই আসনের ভোট নিয়েও ঝঞ্ঝাটের শেষ ছিল না ত্রিপুরার। পূর্ব আসনের ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস ও রিগিং-এর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপির হাতে মার খেয়ে হাউমাউ কান্না জুড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মামুন খান। পরিস্থিতি এমন হয় যে, পশ্চিম কেন্দ্রের ভোট পিছিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, শাসকের আসনে যে-ই বসে, সে-ই যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতাটাকে রপ্ত করে নেয়। ২০০৩-এর বাংলার সিপিএম, ১৮-র তৃণমূল কিংবা ১৯-এর ত্রিপুরার বিজেপি- কোনও পার্থক্য নেই। আর সবারই সেই এক ‘চিত্রনাট্য’। ‘বিরোধীরা প্রার্থী না দিতে পারলে আমরা কী করতে পারি!