ভিমরুলের চাকে ঢিল পড়তেই প্রতিহিংসা! অ্যাম্বুলেন্সের দালাল চক্রের খবরের পর্দাফাঁস হতেই হামলা। মালদার ইংরেজবাজারে খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত এরাজ্যের এক নামকরা টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার, চিত্র সাংবাদিক। দুষ্কৃতীরা ঘিরে ধরে বেধড়ক-বেধড়ক মার মারে তাঁদের। ভাঙচুর করা হয় ক্যামেরা, বুম। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
সাংবাদিক বৈঠকে সুকান্ত এদিন বলেন, “গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হল সংবাদমাধ্যম। সেই সংবাদমাধ্যম কোনওভাবে আক্রান্ত হলে গণতন্ত্রের পক্ষে তা ক্ষতিকর। শুধু মালদা কেন গোটা রাজ্য জুড়ে এমন নানা চক্র…সিন্ডিকেট চলে। শুধু বালি-সিমেন্টের সিন্ডিকেট নয়, রোগী, ডাক্তার হাসপাতাল, মানুষ, জীবন নিয়েও সিন্ডিকেট চলে। সেই সিন্ডিকেটের ভাগ পায় তৃণমূল। আর সেই সিন্ডিকেট চক্র ভাঙতে গেলেই সে বিজেপি হোক বা অন্য কোনও বিরোধী দল বা সংবাদমাধ্যম, যেই হোক না কেন বিরুদ্ধে গেলেই আক্রান্ত হতে হয়।”
অন্যদিকে, এই ঘটনায় তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করি। এই ঘটনা তদন্তসাপেক্ষ। কোনও সাংবাদিক যদি খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হন তবে তাঁদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি প্রকাশ করছি।”
খবরের সূত্রপাত হয় মালদায়। গত ৩ ডিসেম্বর মালদার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কন্য়া সন্তানের জন্ম দেন এক প্রসূতি। কিন্তু সেই সময় হাসপাতালের তরফ থেকে দাবি করা হয় যে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যই তাঁর স্বামী ও পরিবার তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
কিন্তু ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই মিথ্যা প্রমাণিত হয় সেই ঘটনা। সত্যি ঘটনা সামনে আনে ঐ বাংলা সংবাদ চ্যানেলটি। দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামে পৌঁছায় ঐ বাংলা সংবাদ চ্যানেলের প্রতিনিধি। সেখানেই ওই মহিলার বাড়ি।
তখন ওই মহিলা জানান যে, কন্যা সন্তান হওয়ার জন্য নয়, হাসপাতালের আকাশ সমান বিল মেটাতেই ভিনরাজ্যে কাজের জন্য পাড়ি দিয়েছেন তাঁর স্বামী। মহিলার বয়ান অনুযায়ী, তারা প্রথমে মালদায় সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ওঠে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালক ওই বেসরকারি হাসপাতালের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলেন গাড়িটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। এই নার্সিংহোমে ভর্তি করতে কারণ এখানকার পরিষেবা ভালো।
ওই সময় কোনও কিছু বিচার না করেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ওই মহিলা। এরপর আইসিইউ-তে তাঁর বিল হয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এত টাকা দেখে ওই মহিলার স্বামী মাথায় হাত দিয়ে বসে পরেন। গরিব পরিবার কোথা থেকে পাবেন এত টাকা? মোট কুড়ি হাজার টাকা জমা দিয়ে বেরিয়ে যান বাকি টাকা রোজগার করতে।
এই ভাবে কেটে যায় প্রায় কুড়ি দিন। এদিকে, মহিলার অভিযোগ হাসপাতালের আয়ারা তাঁকে বোঝাতে শুরু করেন যে কন্যা সন্তান হওয়ার জন্যই তার স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়ছেন।
সূত্রের খবর, এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবে খবর পায় যে এতদিন রোগীকে হাসপাতালে রাখায় তার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল ভাঙচুর করতে আসছে। সেই খবর পাওয়া মাত্রই সত্বর তারা যোগাযোগ করে পুলিশের সঙ্গে মকুব করে দেয় তিনলাখের বিল। ছেড়ে দেওয়া হয় মহিলাকে। মালদা ও দক্ষিণদিনাজপুরের পুলিশের সহায়তায় মহিলা পৌঁছায় বাড়িতে।
কিন্তু দিনাজপুরের দুস্থ আদিবাসী প্রসূতিকে কেন নিয়ে আসা হল মালদার ওই বেসরকারি হাসপাতালে? সেই উত্তর খুঁজতে গিয়েই ঝুলি থেকে বেরিয়ে এল বিড়াল। জানা গেল, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার লাগাম ছাড়িয়ে নার্সিংহোমের ক্ষপ্পরে পড়ল আদিবাসী পরিবার।
এই বিষয়ে জখম হওয়া সংবাদ চ্যানেলের প্রতিনিধি জানান, “মালদায় রমরমিয়ে চলছে দালাল চক্র। যারা এই ভাবে অ্যাম্বুলেন্সে করে অসুস্থ রোগীদের বিভিন্ন কারসাজি করে বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করে দেন। আর তারপরই সেই নার্সিংহোম আকাশ সম বিল করে রোগীর পরিবারের হাতে ধরিয়ে দেয়। এই সকল বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর আমরা যখন বেসরকারি ওই হাসপাতালটিতে পৌঁছালাম সেই সময় হাসপাতালের স্টাফ সেজে থাকা দুষ্কৃতী আমাদের উপর হামলা চালায়। আমাদের ক্যামেরা ম্যানের ক্যামেরা হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বেধড়ক ভাঙচুর করে তাঁকে। আমি বাঁচাতে গেলে আক্রমণ করা হয় আমাকেও। এই দুষ্কৃতীদের যে খবর আমরা পেয়েছি তা হল এরা বিভিন্ন সমাজ বিরোধী কাজের সঙ্গে সরাসরি লিপ্ত।“