বাংলায় চলতি কাটমানি তর্ক লোকসভায় আলোচনার বিষয় নয়। তবু সেই বিষয়টিকেই মঙ্গলবার লোকসভায় উত্থাপন করলেন হুগলির বিজেপি সাংসদ তথা বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রবল আক্রমণাত্মক হয়ে এ দিন লোকসভায় তিনি বলেন, কাটমানির টাকা সরাসরি কালীঘাটে পৌঁছচ্ছে। তেরো খানা ফ্ল্যাট, থাইল্যান্ডের সোনা – সবই কেনা হচ্ছে কাটমানির টাকায়।
লোকসভার জিরো আওয়ারে লকেট যখন এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন, তখন প্রবল চিৎকার করে তাঁকে বাধা দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সভায় উপস্থিত তৃণমূল সাংসদরা। কিন্তু কে কার কথা শোনে!
পর্যবেক্ষকদের মতে, গোটা এই ছবিতে যেন ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। বাম জমানায় বাংলার রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে লোকসভায় আকছার সরব হতেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তা নিয়ে কেন্দ্রের বিশেষ কিছু বলার নেই। সংসদে তা আলোচনার সুযোগও কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও মমতা সেই প্রসঙ্গ তুলতেন। রাজনৈতিক ভাবে বাংলার মানুষকে বার্তা দিতেই তা করতেন মমতা।
লকেটের উদ্দেশ্যও তাই। সেই কারণে কৌশলে এ দিন লোকসভায় বাংলাতেই বলেছেন লকেট। যাতে বাংলার মানুষ তা শোনেন। তিনি বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু – বাংলায় সবেতেই কাটমানি নেওয়া চলছে। মুখ্যমন্ত্রী একদিকে তাঁর দলের লোকেদের বলছেন ২৫ পারসেন্ট রাখো, ৭৫ পারসেন্ট পাঠিয়ে দাও। আবার উনিই কাটমানির কথা বলছেন। চোরেরাই বলছে চোরেদের বিচার হবে। কিন্তু বাংলার মানুষ জানে কাটমানির টাকা কোথায় যাচ্ছে। ওই টাকা যাচ্ছে কালীঘাটে। তা দিয়ে গোয়া-পুরীতে হোটেল কেনা হচ্ছে, কালীঘাটে ১৩ খানা ফ্ল্যাট হয়েছে, থাইল্যান্ড থেকে সোনা আসছে।
এই বিষয়টি নিয়ে যে লোকসভায় আলোচনা করা যায় না সে ব্যাপারে এ দিন দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে তৃণমূল। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন তথা সংবিধানের ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের দাবি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে রাজ্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ে সরব হতেন। তেমনই কাটমানি প্রসঙ্গ সংসদে উত্থাপনের ব্যাপারে নিয়মের ফাঁক বের করার চেষ্টা করছে বিজেপি-ও। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানে যে প্রকল্প বাংলায় চলছে, সেখানে কাটমানি নেওয়া হচ্ছে। একশ দিনের কাজ, বিধবা পেনশন, আবাস যোজনায় কেন্দ্র সিংহ ভাগ টাকা দেয়। সেখান থেকে কাটমানি নিচ্ছে তৃণমূলের নেতৃত্ব। সুতরাং সংসদে সেই দুর্নীতির কথা তো তুলতেই হবে।