নন্দীগ্রাম আন্দোলনে কার ভূমিকা বেশি, এ নিয়ে গত একবছর ধরে দড়ি টানাটানি অব্যাহত। বুধবার ফের রাজনীতির চর্চায় সেই নন্দীগ্রাম। উপলক্ষ নন্দীগ্রাম দিবস। যে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের উপর ভর করে রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল ভিত শক্ত করেছিল, ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা, তাতে শুভেন্দু দাবি করলেন তৃণমূল নেতৃত্বের কোনও ভূমিকাই ছিল না! নাম না করে তৃণমূল সুপ্রিমোকে আক্রমণ করে মন্তব্য করেন, ‘চকোলেট-স্যান্ডউইচ খেয়ে অনশনের নামে নাটক করছিলেন’।
এদিন নন্দীগ্রামের শহিদ দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক দুটি কর্মসূচি পালন হয়। সকালের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা। আর বিকালে শহিদ বেদীকে গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে সেখানে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নানা বিশেষণে শাসক দলকে কটাক্ষ করেন তিনি। এমনকি মমতাকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, “যখন চকোলেট আর স্যান্ডউইচ খেয়ে অনশনের নামে নাটক করেছিলেন তখন, সরবত খাওয়াতে এসেছিলেন রাজনাথ সিং। নন্দীগ্রামের রাস্তাগুলো পরিষ্কার করেছে কে? তিনি হলেন লালকৃষ্ণ আডবানি।”
শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্যের রেশ ধরে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে কার ভূমিকা বেশি তা নিয়ে নিজের বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু। বলেন, “খুব বড় বড় কথা। বলে, আমাদের মালিক না থাকলে নন্দীগ্রাম হতো না। কিন্তু আমি বলি লালকৃষ্ণ আদবানি না এলে নন্দীগ্রামে কেউ ঢুকতে পারতেন না। ১৪ মার্চ পিছন থেকে গুলি করে খুন করল। কাউকে ঢুকতে দেয়নি। আমি নিজে ১৫ মার্চ সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর দিয়ে বিকাল সাড়ে তিনটের সময় নন্দীগ্রামে পৌঁছেছিলাম। আর সবাই ঢুকতে পারল ১৭ই মার্চ। সঙ্গে তৎকালীন লোকসভার বিরোধী দলনেতা লালকৃষ্ণ আডবানি, সঙ্গে সুষমা স্বরাজ, আজকের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া এবং সঙ্গে আরও অনেক নেতা।”
তিনি যোগ করেন, “সেদিন হেঁড়িয়া দিয়ে অবরোধ তুলতে তুলতে ভাঙাবেড়িয়া দিয়ে সোনাচূড়া বাজারে পৌঁছে ছিল। আর সেদিন তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে যে তিনজন ছিলেন, তাঁরা হলেন একজন আমার পিতৃদেব, আমি ছিলাম এবং দীনেশ ত্রিবেদী।”
এ দিন সকালেই শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তৃণমূলের একাধিক নেতা মন্ত্রী শুভেন্দুকে চাঁচাছোলা আক্রমণ করেন। এ নিয়ে শুভেন্দুর প্রতিক্রিয়া, “কিছু চাকরকে পাঠিয়েছিলেন পিসি আর ভাইপো। আর কিছু জিহাদিকে নিয়ে এখানে শুধুই কুৎসা কুৎসা আর কুৎসা। আন্দোলন নিয়ে একটা শব্দ বা বাক্য বলেননি। একটা শহিদের নাম বলেনি। এমনকি জানেও না। তাই ভগবান এদের ক্ষমা কর। এরা কমপ্লিটলি চাকর-বাকর।”
এখানেই থামেননি তিনি। দীর্ঘ বক্তব্যে শুভেন্দু এক জায়গায় বলেন, “সবাই অতীত ভুলে না। মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর কোম্পানি অতীত ভুলে যেতে পারে। এই শহিদ পরিবারের অভাবী দরিদ্রলোক গুলো বেইমান নয়। তাই তাঁরা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আছে। বিধানসভায় দেখিয়েছেন আপনারা, আমি নেতৃত্ব দিয়েছি। পঞ্চায়েতেও দেখাব। আগে বিরোধী দল ছিল সিপিএম এবং সঙ্গে কংগ্রেস। এখন বিরোধী দলের নাম বিজেপি।”
তার পর নন্দীগ্রামের আন্দোলনের শুভেন্দু তাঁর নিজের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, “এই আন্দোলনে আমার কী ভূমিকা ছিল এবং আপনাদের কী ভূমিকা ছিল সেই মায়ের কাছে মাসির গল্প বলে লাভ নেই। পাড়ায় পাড়ায়, কোণায় কোণায় আপনাদের সব উত্তর পেয়ে যাবেন। শত্রু কে বন্ধু কে, কে বাড়িতে বসে ছিল আর কে রাস্তায় নেমেছিল আর কে ঠেলায় পড়ে খোঁজ রাখে আর কে নিজের আত্মীয়র মত খোঁজ রাখে এটা সবাই জানে।”
এদিন শুভেন্দু ছাড়াও শহিদ দিবস উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন খেজুরির বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক, তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি নবারুণ নায়েক, সহ-সভাপতি প্রলয় পাল, স্থানীয় বিজেপি নেতা মেঘনাথ পাল সহ- শহিদ পরিবারের সদস্যরা।