দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন (Population control act) নিয়ে আসার লক্ষ্যে এক পা এক পা করে এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি। শুরুটা হয়েছিল বিজেপিশাসিত রাজ্য অসম দিয়ে। এবার এগিয়ে এসেছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশও। আজ রবিবার, ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের নতুন জনসংখ্যা নীতি ঘোষণা করার কথা। এই নীতির মাধ্যমেই যে রাজ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে আসা হবে, সেই বার্তা একপ্রকার দিয়েই দিয়েছেন আদিত্যনাথ। আইনের খসড়া রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এ বিষয়ে মানুষের মতামত চাওয়া হয়েছে। যোগী রাজ্যের এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে যখন সে রাজ্যে মাত্র আট মাসের মধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করার পিছনে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যোগী (Yogi Adityanath) রাজ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করে পরবর্তীকালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হলে কেন্দ্র তথা বিজেপিও যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সংক্রান্ত বিল সংসদে নিয়ে আসবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।
দেশের বিপুল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের যে প্রয়োজন রয়েছে সেই বার্তা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার পরেই দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণেই প্রধানমন্ত্রী দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আগামী প্রজন্মকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। সঙ্গে দেশের মানুষও যাতে জন্ম নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দেয় সেই আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, “অনেকেই ছোট পরিবার রেখে তার মাধ্যমেই দেশভক্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁদের থেকে শেখা দরকার। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী জন্ম নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সওয়াল করার পর থেকেই বিজেপির একাধিক সাংসদ তাঁকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে আইন নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন। সংসদেও তাঁরা একই দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন। গত বাদল অধিবেশনেও BJP সাংসদদের লোকসভার বিশেষ উল্লেখ পর্বে জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন আনার পক্ষে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে। দেশে করোনা মহামারী পরিস্থিতি না হলে এতদিনে জন্মনিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল আনা হয়ে যেত, সে কথা বিজেপির অন্দরেও একাধিকবার শোনা গিয়েছে। বিল আনা হলে তা নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হতে পারে এবং বিরোধীরা আপত্তি জানালে হই হট্টগোল হতে পারে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না কেন্দ্র।
বিশেষ করে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ নিয়ে কেন্দ্রের ভাবমূর্তিতে যে ধাক্কা লেগেছে, তাতে কোনও বিতর্কের মধ্যেই সরকার এই মুহূর্তে যেতে চাইছে না। আবার এক্ষেত্রে একেবারে হাত গুটিয়ে বসে থাকতেও রাজি নয় বিজেপি। তাই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়ে এ বিষয়ে তারা জল মাপার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই আইন নিয়ে এসে শুধুমাত্র দেশের সবার জন্য দুই সন্তান নীতি চালু করা সরকারের লক্ষ্য নয়। এর পিছনে অন্য গূঢ় কারণ রয়েছে। এই আইনের হাত ধরেই পরবর্তীকালে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করাই বিজেপির প্রধান লক্ষ্য। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ইস্তেহারে রামমন্দির নির্মাণ, ৩৭০ ধারা বিলোপ-সহ দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বাকি দুই কাজ কেন্দ্র ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে। কেন্দ্র এবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর কাজ শুরু করে দিক, তা অনেকদিন ধরেই চাইছে সংঘ পরিবারও। তাতে দেশে মেরুকরণের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ আইন আনার পক্ষে সওয়াল করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও। অসম ও উত্তরপ্রদেশ পারলে কেন্দ্রের অবিলম্বে জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন উচিত বলে দাবি করেছেন VHP-র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জৈন।