জল্পনার অবসান! অবশেষে শিল্পশহরের ‘জামাই’ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের বিজেপির প্রার্থী। রবিবার তাঁর নামে শিলমোহর দিয়ে ঘোষণা করল বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সম্পাদক জগৎপ্রসাদ নাড্ডা। আলুওয়ালিয়া প্রার্থী হওয়ায় বিরোধীদের খানিকটা চাপ বাড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, গত ১০ মার্চ ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়। এরাজ্যের ৪২ আসনের প্রায় সবক’টিতে বিরোধীরা প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রচার শুরু হয়েছে পুরোদমে। এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ কেউই৷ দেশজুড়ে গেরুয়া শিবিরের দমকা হওয়া। রাজ্যের ৪১ টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা না করায় বিস্তর জল্পনা শুরু হয়। আর তাই বিরেধীরা কটাক্ষ শুরু করে। মুকুল ঘনিষ্ট না সঙ্ঘ ঘনিষ্ট তা নিয়েও জল্পনার শেষ ছিল না। ৩ এপ্রিল বিজেপির ব্রিগেড সভার পর জল্পনার খানিকটা অবসান হতে শুরু করে। গুঞ্জন শুরু হয় শিল্পশহরের ‘জামাই’কে কি প্রার্থী করতে চলছে গেরুয়া শিবির? রবিবার সব জল্পনার অবসান হয়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সম্পাদক জগৎপ্রসাদ নাড্ডা এদিন দুটি আসনের দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী হয়েছে আশীষ কুমার বিশ্বাস। অন্যদিকে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের প্রার্থী করা হয়েছে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। প্রশ্ন, কে এই আলুওয়ালিয়া?
সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া মূলত আসানসোলের জেকে নগরের বাসিন্দা। পড়াশোনা আসানসোলে। এছাড়া পরে বর্ধমান বিশ্বাবিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়াশোনা করেন। পেশায় আইনজীবী। দুর্গাপুর গোপাল মাঠে বাঙ্গালী বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে বিয়ে করেন। স্ত্রী মনিকা আলুওয়ালিয়া। রাজনৈতিক জীবন শুরু কংগ্রেস থেকে। ১৯৮৬ সালে প্রথম রাজ্যসভার সাংসদ হন বিহারের। পরে লোকসভার সাংসদ ও একাধিক কেন্দ্রে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীকালে বিজেপিতে যোগ দেন। গত ২০১৪ সালে দার্জিলিং থেকে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। কর্মদক্ষতায় যথেষ্ট ভাল। তেমনই অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর খুবই কাছের লোক। তিনি কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। সেই কারণে দুর্গাপুরের হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কারখানা পুনরুজ্জীবন নিয়ে উদ্যোগীও হয়েছেন।
আর তাই বর্ধমান-দুর্গাপুরের মত শিল্প-কৃষি সংমিশ্রিত আসনটি মোটেই হাত ছাড়া করতে নারাজ বিজেপি। আর তাই সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার মত বরিষ্ঠ রাজনীতিবিদকে প্রার্থী করে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি।
এদিন ফোনে সুরিন্দরবাবু জানান,” জন্ম ও এবং পড়াশোনা সবই শিল্পাঞ্চলে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকলেও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।” তিনি জানান,” পঞ্চাশের দশকে দুর্গাপুরে যেমন শিল্পের প্রসার ঘটেছিল। তেমনই বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আবার নতুন করে শিল্পের প্রসার ঘটবে। বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা পুনরুজ্জীবন হবে। কৃষির উন্নতি করা হবে। এককথায় প্রাণ ফিরে পাবে বর্ধমান-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ও কৃষি অঞ্চল।” তবে জামাই বাবু বিজেপি প্রার্থী হলেও, শ্যালক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলকেই জয়ী দেখতে চান। অমিতাভ বাবু দুর্গাপুর পুরসভার তৃণমূল থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলার। তিনি বলেন,” পরিবারিক সম্পর্কটা পরিবারে সীমাবদ্ধ। রাজনীতিটা রাজনৈতিক ময়দানে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মা। তাই আশাবাদী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাধানমন্ত্রী হবেন। এবং এই আসনে তৃণমূল জিতবে।”