ভোটের পর থেকেই ঘরে ফেরেননি অনেক বিজেপি কর্মী। সন্ত্রাসের কারণে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের একাধিক জায়গায়। এখনও ঘরছাড়া বহু বিজেপি কর্মী ও সমর্থক। তাই ভাইফোঁটার দিন সেই সমস্ত কর্মী-সমর্থকদের একটু আনন্দ দিতে বিশেষ ভাইফোঁটার আয়োজন করেছিল জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। পশ্চিম মেদিনীপুরে বিজেপি কর্মীদের জন্য এই আয়জন করা হয়। উভয় সম্প্রদায়ের ভাইরা ফোঁটা নিয়েছেন এ দিন।
জানা গিয়েছে, এখনও জেলা বিজেপির পার্টি অফিসে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন নারায়ণগড়, দাঁতন সহ বেশ কিছু এলাকার কয়েকজন বিজেপি কর্মী ও সমর্থক। আর সেই সমস্ত বিজেপি কর্মীদের আজ ভাইফোঁটা দিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা। ভাইফোঁটার দিনে কেউ বা চোখের জলে, কেউ আবার হাসিমুখেই অঙ্গীকার করলেন বোনেদের রক্ষা করার।
দাঁতনের এক বিজেপি কর্মী বাসন্তী পাত্র চোখের জলে জানিয়ে দিলেন, আজকের দিনেও তিনি ভাইদের কাছে যেতে পারছেন না শুধুমাত্র বিজেপি করার অপরাধে। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর তিনজন ভাই তা সত্ত্বেও কাউকেই চন্দনের একটা ফোঁটাও দিতে পারলেন না তিনি। তাঁর স্বামী শ্রীকান্ত পাত্র একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মী ছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের পরেই শ্রীকান্ত পাত্রকে খুন হতে হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। একদিকে স্বামীর মৃত্যু, অন্যদিকে ভাইদের কপালে ফোঁটা না দিতে পারার দুঃখ, এই নিয়েই আজ বিজেপি কার্যালয়ে বসে কাটালেন দিনভর। বাসন্তী পাত্র মেদিনীপুর জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে এ দিন সারাদিন অঝোরে কেঁদেছেন।
মেদিনীপুর শহরে ঘর ছাড়া বিজেপি কর্মীদের ফোঁটা দিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মী বোনেরা। জেলা পার্টি অফিসে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি সৌমেন তেওয়ারি, ড: শঙ্কর গুছাইত সহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। ভোট পরবর্তী হিংসায় যারা ঘর ছাড়া হয়ে রয়েছেন তাদের ফোঁটা দিয়ে জানান দেওয়া হয় যে তাঁরা একা নয়, তাঁদের পাশে সবাই আছেন।
একুশের ভোটের পর রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ উঠেছিল বেশ কয়েকটি। তার মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগই করে বিজেপি। তারা অভিযোগ করে, বহু ক্ষেত্রে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে। শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করতে অনীহা দেখিয়েছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। সবমিলিয়ে বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসায় সিবিআই দায়ের করা মামলার সংখ্যা ৪৩।
ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।
প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কর্তা। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়।