টালিগঞ্জের শিল্পী ও জুনিয়ার-সিনিয়ার কলাকুশলীদের প্রায় ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওনা, বকেয়া সৌজন্যে প্রযোজক-পরিচালক-শিল্পী অরিন্দম শীল এবং তাঁর প্রযোজিত ‘ভূমিকন্যা’ সিরিয়াল।
২০১৮-র ৩০ জুলাই স্টার জলসায় শুরু হয়েছিল ‘ভূমিকন্যা’ সিরিয়ালটি। তারপর আগস্টের ১৮ তারিখ থেকে দিন চারেকের জন্য শিল্পীরা ধর্মঘট ডেকে পুরো টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতেই ধর্মঘট ডেকেছিলেন। তাঁদের অনেক দাবিদাওয়ার মধ্যে একটি দাবি ছিল সঠিক সময়ে পেমেন্ট পাওয়া। এই ব্যাপারে তাঁদের অভিযোগ ছিল যে, প্রোডিউসারদের অনেকেই ঠিক সময়ে আর্টিস্ট ও টেকনিশিয়ানদের পেমেন্ট করেন না, সেই অসময়টা ডিলে হতে হতে চার-পাঁচ মাস হয়ে দাঁড়ায়, নতুন শিল্পীদের ভোগান্তি আরও বেশি এবং তার পরে চেক দিলেও তা নিয়মিত বাউন্স করে। এই অভিযোগ কোন একক প্রোডিউসারের বিরুদ্ধে উঠেছিল এমন নয়, টালিগঞ্জের সিরিয়ালজগতের চরম অব্যবস্থার বিরুদ্ধে উঠেছিল। সেখানে ‘ভূমিকন্যা’ বা অরিন্দম শীল একটা অংশ মাত্র। ২৩ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী অভিযুক্ত প্রযোজক ও ধর্মঘটী শিল্পীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যাপারটা মিটমাট করে দেন নবান্নে ডেকে। প্রযোজকরা ঠিক সময়ে পেমেন্ট দেবার অঙ্গীকার করেন। সেখানে অরিন্দমবাবুও ছিলেন। সবাই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল, দর্শক এবং ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু কুমড়ো গাছে ফের কুমড়ো ফলতে দেরি হল না।
দেখা গেল, ৪ সেপ্টেম্বর জুনিয়ার টেকনিশিয়ানদের শ্যুটিং চলাকালীন দুপুরবেলায় ধর্মঘট ডাকতে হল। কেন? পেমেন্ট বাকি। সেদিন অবশ্য সমস্ত ইন্ডাস্ট্রিতে ধর্মঘট হয়নি। হয়েছিল একটি সিরিয়ালের শ্যুটিং-এর আউটডোরে। সেই সিরিয়ালের নাম, ভূমিকন্যা। জুনিয়ার টেকনিশিয়ানরা সে-যাত্রায় পেমেন্ট আদায় করে ছেড়েছিলেন। কিন্তু সে যাত্রায় তো করলেন আদায়, তারপর? তারপর বকেয়া জমল সব্বার আর টিআরপি-তে ঝাড় খেয়ে অকালে এবছরের জানুয়ারিতে দুম করে সিরিয়ালই বন্ধ হয়ে গেল। জমে গেল ১৪ লক্ষ ২০ হাজারের বকেয়া। এতো টাকার বকেয়া তো আর দু’একদিনে জমতে পারে না। এখন শ্যুটিং যখন নেই, তখন শ্যুটিং বন্ধ করে তো আর প্রাপ্য আদায় করার উপায় নেই! অরিন্দমবাবু তাঁদের জানালেন যে, চ্যানেল থেকে তিনি নাকি টাকা পাননি, পেলেই সবার বকেয়া মিটিয়ে দেবেন। যাদের তাঁর ওপর ভরসা হল, তাঁরা অপেক্ষা করতে চাইলেন। আর যাদের হল না, তাঁরা ফেডারেশনে গিয়ে অভিযোগ জানালেন। এখন ফেডারেশনের সঙ্গে মিটিং-এর পরে অরিন্দমবাবু জানিয়েছেন যে, আগামী ৩১ মার্চ-এর মধ্যে তিনি সবার বকেয়া মিটিয়ে দেবেন।
এখন কথা হচ্ছে, আগস্টে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পরেও এই অব্যবস্থা হয় কি করে? সূত্রের খবর, পেমেন্টের ক্ষেত্রে অরাজকতা চালাচ্ছেন এখনও দু’একজন প্রযোজক। তার মানে, তাঁরা নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকেও খুব একটা পাত্তা দেন না এবং দিতে চান না! অরিন্দমবাবুর ক্ষেত্রে চ্যানেলের কাছ থেকে টাকা না-পাওয়াটা যদি সত্যি কারণ হয়, তাহলেও এতগুলো শিল্পী ও কলাকুশলী সেজন্য ভোগান্তির শিকার হবেন কেন? তাঁদের তো ঠিক সময়ে পেমেন্ট হয়ে যাওয়ার কথা, তাঁরা তো তাঁর প্রোডাকশনকে ভোগাননি!

