নন্দীগ্রামঃ ২০০৭ সালের মার্চ মাস ছিল নন্দীগ্রামের জন্য এক অভিশপ্ত মাস। কারণ ওই মাসেই জমি বাঁচাতে গিয়ে নন্দীগ্রামে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। এখনও কয়েকজন নিখোঁজ। আর সেই স্মৃতি বুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে গোটা নন্দীগ্রাম। নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রথম শহীদ হন ভরত মণ্ডল।
ভরত মণ্ডলের বাড়ি নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায়। একজন সাধারণ চাষি পরিবারের ছেলে ভরত, সেদিন নিজের অধিকারের দাবিতে বুক পেতে দিয়েছিলেন গুলির সামনে। তবে শুধু ভরতই না, সেদিন নন্দীগ্রামের অনেকেই পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজেদের অধিকারের দাবিতে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকেই শহীদ হয়েছিলেন, আবার অনেকেই হয়েছিলেন গুরুতর আহত। কিন্তু নন্দীগ্রামের এই আন্দোলনকারীদের কি কেউ মনে রেখেছে?
নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে বাংলার মসনদে বসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই মনে রাখেন নি ওই আন্দোলনকারীদের। আর এই কারণে দীর্ঘ ৫ বছর পর নন্দীগ্রামে যখন প্রথম সভা করতে যান মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে দু-একটা শহীদ পরিবারই উপস্থিত ছিল। আরেকদিকে, নন্দীগ্রামের প্রথম শহীদ ভরত মণ্ডলের পরিবার অভিযোগ করে জানায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী নামটাও ঠিকমতো জানেন না। ভরত মণ্ডলকে ভারত মণ্ডল বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী কোনদিনও আমাদের খোঁজ নেন নি, আমরা কীভাবে আছি, কেমন আছি কোনদিনও জানতে চাননি তিনি।”
ভরত মণ্ডলের পরিবারকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, সেদিনের পর থেকে কি কেউ তাঁদের খোঁজ নেয় নি? তখন ওনারা জানান, ‘শুভেন্দুদা ভালো, খারাপ জানিনা। তবে উনি নিয়মিত আমাদের খোঁজ নিতেন। অসময়ে সাহায্য করতেন। পাশে দাঁড়াতেন। এখন তৃণমূলের লোকজনেরা আমাদের বলছে আমরা বিজেপি হয়ে গেছি। সত্যি বলতে, আমরা না তৃণমূল আর না বিজেপি। ওসব নিয়ে আমাদের কোনও মাথা ব্যথাও নেই।”
মণ্ডল পরিবার জানান, প্রতিশ্রুতি অনেক পেয়েছি, পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে অনেক। কিন্তু ভোটে জিতে আমাদের আর কেউ খোঁজ নেয়না। সবাই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যায়। ঠিক যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলনের প্রথম শহীদ পরিবারকে ভুলে গেছেন, তেমনই।
মণ্ডল পরিবার জানায়, স্মরণসভায় ভরত মণ্ডলের নাম নেওয়া হয়না। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর সভায় মণ্ডল পরিবারকে একবারো ডাকা হয়নি।