১৯২৫ সালে বার্মার মান্দালয় জেলে বন্দি থাকাকালীন জেল কর্তৃপক্ষ জেলের ভিতরে দুর্গাপূজার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু জেলের মধ্যেই অনশনে বসেন এবং অবশেষে তার অদম্য প্রচেষ্টার পর জেলকতৃপক্ষ বিধিনিষেধ তুলে নিতে বাধ্য হয়। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু জানতেন যে ভারতবর্ষকে ঐক্যর বন্ধনে বাঁধার জন্য তার সংস্কৃতি এবং প্রাচীন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত আবশ্যিক।
শুধু নেতাজীই নয়, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের আর এক সেনাপতি অরবিন্দ ঘোষ যিনি তার বিখ্যাত উত্তর পাড়া অভিভাষণে বলেন ভারতবর্ষের জাতীয়তা বা Nationalism হলো সনাতন ধর্ম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যে ধর্মের ভিতরে সহনশীলতা সর্বাধিক সেই ধর্মই হলো ভারতের জাতীয়তা।
এই জাতীয়তাবোধের ধারণা আমরা স্বামী বিবেকানন্দের ভিতরেও পাই। তিনি বলেছিলেন ভারতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং পরম্পরা ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি অসম্ভব। তাই তিনি ভারতবর্ষকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তো আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে তার বিখ্যাত আনন্দমঠ উপস্যাসে ‘ত্বং হি দুর্গা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বাঙ্গালি মনীষীদের চিন্তাধারা এবং আদর্শকে বাস্তবের রূপ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের স্রষ্টা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। ১৯৪৬ সালের হিন্দু নরসংহারের পর যখন ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত হয়ে যায় তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির নেতৃত্বে বঙ্গীয় আইনসভায় অবিভক্ত বাঙ্গলার হিন্দু প্রতিনিধিদের ভোটাভুটির ফলে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্য তৈরি হয়। পরবর্তীতে দেশভাগের পর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি clean exchange of population 71970173117 বিনিময়ের পক্ষে জোরদার আওয়াজ তোলেন। জনসংখ্যার বিনিময় বলতে তিনি পাকিস্তানের হিন্দুদের ভারতে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতা কতটুকু সেটা আজ বাংলাদেশের বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের করুণ পরিণতি এবং ক্রমহ্রাসের প্রবণতা দেখলে বোঝা যায়।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্রে তৎকালীন সরসঙ্ঘচালক শ্রীগুরুজীর সঙ্গে আলাপ আলোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতীয় জনসঙ্ প্রতিষ্ঠা করেন।
তাঁর ভারতীয় জনসঙ্ঘ দলটির প্রতিষ্ঠার কারণ ছিল বাঙ্গালি হিন্দুদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান নিশ্চিত করা এবং ভারতীয় মূল ধারা থেকে যাতে বাঙ্গালি হিন্দু সমাজ বিচ্ছিন্ন না হয় সেটি নিশ্চিত করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশভাগের ৭২ বছর পর বাঙ্গলাকে আজ মা দুর্গার বিসর্জনের জন্য আদালতের কড়া নাড়তে হচ্ছে। ক্রমাগত ঘটে চলেছে। ধুলাগড়, কালিয়াচক, বসিরহাট, দেগঙ্গা, নলিয়াখালির মতো ঘটনা যার ফলে হিন্দু সমাজ আজ বিপন্ন এবং অসহায়।
সেইজন্য এইবারের নির্বাচন বাঙ্গলার জন্য ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। বাঙ্গলার ৪২ জন বিজেপি প্রার্থীর কাছে বড়ো চ্যালেঞ্জ হলো নেতাজী, ঋষি অরবিন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, বিবেকানন্দের স্বপ্ন এবং আদর্শকে বাঙ্গলার বুকে পুনঃস্থাপন করা। আর একথা ভুললে চলবে না বাঙ্গলাকে বাদ দিয়ে যেমন ভারতবর্ষকে কল্পনা করা যায় না তেমনিভাবে স্বামীজীর মতে ভারতবর্ষের মৃত্যু মানে সত্যের নিশ্চিত মৃত্যু ঘটা।
জ্যোতি প্রকাশ চ্যাটার্জি
2019-05-25