বাংলার_গর্ব বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী (১৮৪১-১৮৯৯) ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের আচার্য এবং নব্যবৈষ্ণববাদের প্রবক্তা। নদীয়া জেলার দহকুল গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ অদ্বৈতাচার্যের বংশধর।

বিজয়কৃষ্ণ শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর টোলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি বেদান্ত পাঠে মনোনিবেশ করেন এবং ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। অতঃপর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উৎসাহে দীক্ষা গ্রহণ করে তিনি ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি কিছুদিন মেডিক্যাল কলেজেও অধ্যয়ন করেন।

বিজয়কৃষ্ণ ছিলেন প্রখ্যাত ধর্মপ্রচারক। ব্রাহ্মধর্ম প্রচারকার্যে তিনি একাদিক্রমে ২৫ বছর ভারতের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম ব্রাহ্মসমাজের আচার্য হয়ে পূর্ববঙ্গে আসেন এবং ঢাকায় কিছুদিন ব্রাহ্মসমাজের আচার্য কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে কাজ করেন। শান্তিপুর, ময়মনসিংহ, গয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রাহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।

এরপর বিজয়কৃষ্ণ গয়াতে সাধুসঙ্গ যাপন করেন। ফলে তাঁর মধ্যে বৈরাগ্যভাবের উদয় হয়। এ সময় বৈষ্ণবধর্মের প্রতি সমধিক আকর্ষণহেতু ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে তাঁর মতভেদ হয় এবং ১৮৮৬ সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের আচার্যপদ থেকে তিনি বিতাড়িত হন। ১৮৮৮ সালে ব্রাহ্ম সমাজ ত্যাগ করে তিনি বৈষ্ণবধর্মে ফিরে যান এবং ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে ধর্মসাধনায় রত হন। উল্লেখ্য যে, ব্রাহ্মধর্মে কেশবচন্দ্র সেনের পূর্বেই বিজয়কৃষ্ণ ভক্তিধারার প্রচলন করেন। তিনি ব্রাহ্মসমাজে আধ্যাত্মিকতার ভাব অনেকটা বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর ব্রাহ্মসমাজ পরিত্যাগের পর থেকে ব্রাহ্মসমাজে আধ্যাত্মিক ধর্মভাবের অনুশীলন হ্রাস পেতে থাকে এবং সমাজের সদস্যগণ প্রধানত সমাজসংস্কার ও দেশহিতকর কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

নব্যবৈষ্ণব আন্দোলনের প্রধান স্থপতি ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ। এ আন্দোলনে তাঁর উল্লেখযোগ্য অনুসারীগণ: বিপিনচন্দ্র পাল (১৮৫৮-১৯৩২), অশ্বিনীকুমার দত্ত (১৮৫৬-১৯২৩), সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮৬৫-১৯৪৮) ও মনোরঞ্জন গুহঠাকুরতা (১৮৫৮-১৯১৯)। এঁদের মধ্যে অশ্বিনীকুমার দত্ত উনিশ শতকের শেষদিকে নব্যবৈষ্ণববাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

বিজয়কৃষ্ণ শেষজীবন কাটান হরিভক্ত বৈষ্ণব হিসেবে। কলকাতা, পুরী প্রভৃতি অঞ্চলে তাঁর অনেক শিষ্য ছিল। নারীজাতির উন্নতি ও স্ত্রীশিক্ষার প্রতি তিনি ছিলেন বিশেষ শ্রদ্ধাশীল এবং এ উদ্দেশ্যে কেশবচন্দ্রের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষাকাজে যোগদান করেন। যোগসাধনাবিষয়ে তিনি প্রশ্নোত্তর নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের (১৮৯৯) ২২ জ্যৈষ্ঠ পুরীতে তিনি দেহ রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.