প্রদীপ কুমার ব্যানার্জি (২৩ জুন, ১৯৩৬ – ২০ মার্চ, ২০২০), যিনি পি কে ব্যানার্জি নামে অধিক পরিচিত[৪], একজন ভারতীয় ফুটবলার এবং প্রশিক্ষক। তিনি ৩৬ বার জাতীয় ম্যাচে ভারতের হয়ে খেলেছেন, এবং ৬ বার ভারতীয় ফুটবল দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জাতীয় স্তরে সর্বমোট ১৯ টি গোল করেছেন।[৫] তিনি প্রথমদিকের অর্জুন পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে একজন। তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেন, এবং আইএফএফএইচএস দ্বারা বিংশ শতকের একজন ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে বিবেচিত হন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফিফার সর্বোচ্চ পুরস্কার, অর্ডার অফ মেরিট পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রদীপ কুমার ব্যানার্জি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ( বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ) অন্তর্গত জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম প্রভাত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা পরিমলবালা দেবী। পি কে ব্যানার্জি জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় এবং জামশেদপুরের কে.এম.পি.এম. বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয় জীবন সম্পূর্ণ করেন।
১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে পিকে ব্যানার্জির ফুটবল জীবনের অভিষেক । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং আরিয়ান ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন। এরপর তিনি পূর্ব রেল ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলেন। তিনি ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে, ১৯ বছর বয়সে পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলেন।
তিনি ভারতের হয়ে তিনটি এশিয়ান গেমস, যথা- টোকিওতে অনুষ্ঠিত ১৯৫৮ এশিয়ান গেমস, জাকার্তাতে অনুষ্ঠিত ১৯৬২ এশিয়ান গেমস, যেখানে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয় এবং স্বর্ণপদক প্রাপ্ত করে, এবং পরবর্তীতে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ১৯৬৬ এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ১৯৫৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসসে জাতীয় দলের হয়ে খেলেন। রোমে হওয়া ১৯৬০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে তিনি ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেন, যেখানে তিনি ফ্রান্স ফুটবল দলের বিরুদ্ধে ১ গোলের মাধ্যমে ১-১ হিসেবে ম্যাচ ড্র করেন। তিনি মারডেকা ফুটবল প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে তিনবার (১৯৫৯, ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ) খেলেন। সেখানে ভারত ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে রূপো, এবং ১৯৬৪-তে ব্রোঞ্জ জেতে। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি অবসর নেন।
পি কে ব্যানার্জির কোচ হিসেবে প্রথম বাটা স্পোর্টস ক্লাবকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৭২-৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং ১৯৮০, ১৯৮৩, ১৯৮৫, ১৯৮৮, ১৯৮৯, ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের প্রশিক্ষণ দেন। তিনি মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবকে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের আনন্দ দিয়েছিলেন। তাঁর প্রশিক্ষণকালে মোহনবাগান আইএফএ শীল্ড, রোভার কাপ এবং ডুরান্ড কাপ একই মরশুমে জিতেছিল, যা মোহনবাগানের একই মরশুমে তিনটি কাপ জেতার প্রথম অধ্যায়। ক্লাব কোচিংয়ের মাধ্যমে তিনি মোট ৫৩টি ট্রফি এনেছিলেন, যার ২৮টি ইস্টবেঙ্গল এবং ২৫টি মোহনবাগানের কোচ থাকাকালীন। জাতীয় দলের কোচ থাকাকালীন ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ভারত এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিল। তিনি ১৯৮৬ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ ছিলেন। এরপর তিনি জামসেদপুরের টাটা ফুটবল একাডেমিতে যুক্ত হন, এবং ১৯৯১-১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানকার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০২০ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ব্যানার্জি কলকাতায় একটি হাসপাতালে মারা যান। তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন।