Bengal Polls: ব্যতিক্রম হাতে গোনা, বোমা-গুলির ‘চেনা ত্রাস’-এর বদলে শান্তির ভোট দেখল ভাঙড়

পিরজাদাকে ঘিরে ধরেছেন ক্ষিপ্ত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। রাজ্য পুলিশের সামনেই আঙুল উঁচিয়ে শাসানি, ‘‘অশান্তি বাধাতে এসেছেন? কে বলেছে আপনাকে আসতে? দিব্যি শান্তিতে ভোট হচ্ছিল। ধর্মীয় উস্কানি দিচ্ছেন। বিজেপি-র থেকে টাকা নিয়ে বিকিয়ে গিয়েছেন। চোর, চোর, চোর। যান এখান থেকে। বাংলা নিজের মেয়েকে চায়।’’ এ কথা বলেই ভাঙড়ের আইএসএফ প্রার্থীর ফতুয়া ধরে টান, বুকে-পিঠে ধাক্কা।

সাঁইহাটা মসজিদের পাশে পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫১ ও ২৫২ নম্বর বুথের সামনে শনিবার বেলা দশটা নাগাদ ক্রমশ দানা বাঁধে উত্তেজনা। এমনিতে ভাঙড়ের ভোট বোমা-গুলি-মারপিটের অনুষঙ্গ ছাড়া হবে, এমন সম্ভাবনা কল্পনাতেও আসে না। সে দিক থেকে ২০২১-এর বিধানসভা ভোট নজির হয়ে থাকল। সন্ত্রাস, আতঙ্কের বদলে শান্তির ভোট দেখল ভাঙড়। ব্যতিক্রম বলতে সাঁইহাটার ঘণ্টা দেড়েকের ওই ঝামেলা আর পরে পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের অন্যতম গড় খামারআইটে অল্পবিস্তর উত্তেজনা। দু’টিই হয়েছে সংযুক্ত মোর্চা-সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী পিরজাদা নৌশাদ সিদ্দিকীকে ঘিরে।

ভোটের আগের রাতেই আচমকা ভাঙড়ের আইসি শ্যামপ্রসাদ সাহাকে বদলি করে দেয় নির্বাচন কমিশন। তাঁর জায়গায় আসেন তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়। এই ঘটনাকে অনেকেই ঝড়ের পূর্বাভাস ভেবেছিলেন। কিন্তু ঝড় আসেনি। শাসকদলের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলামের উপস্থিতি পর্যন্ত সারা দিন টের পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি তাঁর সঙ্গী কাইজারকেও। যে আরাবুলের বিরুদ্ধে অন্যান্য বার বুথের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ভোটারদের শাসানো, বিরোধী দলের কর্মীদের তাড়া করা বা পুলিশকে তোয়াক্কা না করার অভিযোগ উঠত, তিনি গাড়িতে বসে শান্ত গলায় বলছেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি করে ভোট হচ্ছে। অযথা বুথের ধারকাছে যাওয়া যাবে না।’’ আর পিরজাদা বলছেন, ‘‘তৃণমূলের যাঁরা ভোটে গোলমাল পাকাতেন, তাঁরা আমাদের কথায় সন্ত্রাস ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে মিশেছেন।’’

ভোট নিয়ে কার্যত অভিযোগই শোনা যায়নি বিজেপি প্রার্থী সৌমী হাতি বা পাওয়ার গ্রিড-বিরোধী আন্দোলনের হোতা, জমিরক্ষা কমিটির প্রার্থী মির্জা হাসানের গলায়। তৃণমূল প্রার্থী, চিকিৎসক রেজাউল করিম শুধু বামনঘাটা অঞ্চলে দলীয় ভোটারদের স্কুটারের চাকা খুলে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। আর কুইক রেসপন্স টিমের এক কর্তা তাঁর এজেন্ট নান্নু হোসেনকে একাধিক বুথে ঢুকতে দেননি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। দিনের শেষে রেজাউলও বলছেন, ‘‘মানুষ নিজের ভোট দিতে পেরেছেন।’’

এ দিন আইএসএফ প্রার্থী, ফুরফুরা শরিফের ‘ভাইজান’ নৌশাদ সিদ্দিকির (আব্বাস সিদ্দিকির ভাই) অভিযোগ ছিল, সেখানকার দু’টি বুথে তাঁর সমর্থকদের ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল-আশ্রিত গুন্ডা মন্টু। তাঁকে গ্রেফতার করা না-হলে তিনি অবস্থানে বসবেন বলতেই শুরু হয় গোলমাল। নৌশাদকে ঘিরে ধরেন মারমুখী তৃণমূল কর্মীরা। শুরু হয় হুমকি আর ধাক্কা। সংবাদমাধ্যমের সামনেই পুলিশকর্মীরা প্রার্থীকে রক্ষার পরিবর্তে জিপে ঢুকে ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কার্যত অসহায় নৌশাদকে উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। একাধিক গ্রামবাসীর অভিযোগ ছিল, তাঁদের ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে শাসকদলের লোকেরা।

কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিশাল বাহিনী নিয়ে আসেন ভাঙড়ের সদ্য নিযুক্ত আইসি তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়। নৌশাদ তাঁকে বলেন, ‘‘পুলিশের সামনে গুন্ডাগিরি হচ্ছে। আধ ঘণ্টার মধ্যে মন্টুকে ধরতে হবে।’’ আইসি অভিযুক্তকে ধরার আশ্বাস দিলেও উত্তেজনা কমেনি। শেষে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

এর কিছু পরে তৃণমূল সমর্থকেরা আবার বুথের সামনে পথ অবরোধ করেন। পুরোভাগে ছিলেন মহিলারা। তাঁদের দাবি, শেখ আলাউদ্দিন নামে তৃণমূলের এক এজেন্টকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে ছাড়তে হবে। তাঁদেরও ছত্রভঙ্গ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

উত্তেজনা: ভাঙড়ের আইএসএফ প্রার্থী নৌশাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। শনিবার, সাঁইহাটি এলাকায়।
উত্তেজনা: ভাঙড়ের আইএসএফ প্রার্থী নৌশাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। শনিবার, সাঁইহাটি এলাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.