বাংলার_গর্ব রাসবিহারী বসু

রাসবিহারী বসু (মে ২৫, ১৮৮৬–জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫) ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সংগঠক।প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা রাসবিহারী বসুর জন্ম পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রামে।পিতা বিনোদবিহারী বসু। তিনি ভারতের বাইরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জএর ওপর এক বোমা হামলায় নেতৃত্ব দানের কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে সক্ষম হন এবং 1915 সালে জাপানে পালিয়ে যান।

রাসবিহারী বসুর জন্ম পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রামে।পিতা বিনোদবিহারী বসু। তার মায়ের নাম ছিল ভুবনেশ্বরী দেবী। তিনকরি দাসী ছিলেন তার ধাত্রী মাত্রা। রাসবিহারী নামটি দিয়েছিলেন রাসবিহারী বসুর দাদু কালীচরণ বসু । রাসবীহারী বসুর মা যখন গর্ভবতী ছিলেন তখন তার কঠিন ব‍্যামো হয়েছিল। তাই সুবলদহ গ্রামের পশ্চিম পাড়াতে অবস্থিত বিষ্ণুমন্দির বা কৃষ্ণ মন্দিরে মানত করা হয়েছিল যাতে সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দেন, তাই পরবর্তীকালে তার নাতির নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণের অপর নাম রাসবিহারী। রাসবিহারী বসু এবং সুশীলা সরকারের শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল সুবলদহ গ্রামে। তারা সুবলদহ গ্রামে বিধুমুখী দিদিমনির ঘরে বসবাস করতেন। বিধুমুখী ছিলেন একজন বাল্যবিধবা, তিনি ছিলেন কালিচরণ বসুর ভাতৃ বধু। রাসবিহারী বসুর শৈশবের পড়াশোনা সুবলদহের গ্রাম্য পাঠশালায় (বর্তমানে সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়) দাদুর সহচর্যে সম্পন্ন হয়েছিল। রাসবিহারী বসু শৈশবে লাঠিখেলা শিখেছিলেন সুবলদহ গ্রামের শুরিপুকুর ডাঙ্গায়। রাসবিহারী বসু সুবলদহ গ্রামে তার দাদু কালিচরণ বসু এবং তার শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গল্প শুনে তার বিপ্লবী আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামবাসীদের নয়নের মনি। শোনা যায় যে,তিনি ইংরেজদের মূর্তি তৈরি করতেন এবং লাঠি খেলার কৌশলে সেই মূর্তিগুলোকে ভেঙে ফেলতেন। তিনি ডাংগুলি খেলতে খুব ভালোবাসতেন। তিনি শৈশবে সুবলদহ গ্রামে 12 থেকে 14 বছর ছিলেন এছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে সুবলদহ গ্রামে এসে গা ঢাকা দিতেন।পিতা বিনোদবিহারী বসুর কর্মক্ষেত্র হিমাচল প্রদেশের শিমলা ছিল। তিনি সুবলদহ পাঠশালা ,মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজের ছাত্র ছিলেন। জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আলীপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ সালে অভিযুক্ত হন। পর তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেডক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। তার অন্যতম কৃতিত্ব বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা। বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস তার নির্দেশে ও পরিকল্পনায় দিল্লীতে ১৯১২ সালে বোমা ছোঁড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ তাকে কখোনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ভারতজোড়া সশস্ত্র সেনা ও গণ অভ্যুত্থানের বিরাট প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন রাসবিহারী। বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে সেই কর্মকান্ড ফাঁস হয়ে যায়। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতায় সরকারের সন্দেহের উদ্রেক হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন। 1913 সালে তিনি বন্যা বিধ্বস্ত সুবলদহ গ্রামে আসেন এবং ত্রাণ বিলি করেন। ১৯১৫ সালের ১২ ই মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ ‘সানুকি-মারু’ সহযোগে তিনি ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। তার আগে নিজেই পাসপোর্ট অফিস থেকে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয় রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।

তারই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ সালের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। ১৯৪২ সালের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু কে লীগে যোগদান ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় যুদ্ধবন্দি মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদেরকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগে ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাপানি সেনাকর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপে তার প্রকৃত ক্ষমতায় উত্তরণ ও সাফল্য ব্যাহত হয়। তার সেনাপতি মোহন সিংকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সাংগঠনিক কাঠামোটি থেকে যায়। রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ( আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত) গঠন করেন।

মৃত্যুর পূর্বে রাসবিহারী বসুকে জাপান সরকার সম্মানসূচক ‘সেকেন্ড অর্ডার অব দি মেরিট অব দি রাইজিং সান’ খেতাবে ভূষিত করে।

১৯৪৫ সালের ২১ শে জানুয়ারী এই মহান বিপ্লবী জাপানেই পরলোকগমন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.