২০১৬ সাল নাগাদ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাঁকুড়ার ওন্দায় মাইঠা গ্রামে ‘কৃষক বাজার’ তৈরী হয়। কিন্তু তার পরেও প্রায় তিন-তিনটে বছর অতিক্রান্ত। আজও সেই কৃষক বাজার চালু হয়নি। সরকারী কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ খরচ করে তৈরী নীল সাদা রঙে সাজানো গোছানো ওই কৃষক বাজার বর্তমানে ঝোপ-ঝাড়ে ভর্তি আর ছাগলের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটাই অভিযোগ এলাকার চাষীদের।
মূলতঃ কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবেই পরিচিত ওন্দা ব্লক। এখানকার সব্জী এলাকা ও জেলার এক বড় অংশের চাহিদা মিটিয়ে পাড়ি দেয় ভিন রাজ্যেও। এখানকার আশাপুর, কুষ্ঠিয়া, নিকুঞ্জপুর, অযোধ্যা, গামিদ্যা, মাইঠা, বিক্রমপুর সহ অসংখ্য গ্রামে উৎপাদিত সব্জীর টানে দূরদূরান্ত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজার গুলিতে আসেন। কিন্তু কৃষক বাজার তৈরী হলেও তা চালু না হওয়ায় এক জায়গা থেকে সংগ্রহের সুযোগ মিলছেনা। এলাকার চাষীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে স্থানীয় ওলা বাজার থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মাইঠা গ্রামে ঐ কৃষক বাজার তৈরী হয়েছে। ফলে ঐ প্রত্যন্ত এলাকায় ঐ কৃষক বাজারে কোন চাষী-ব্যবসায়ীই যেতে চাইছেননা।
কৃষক স্বপন ঘোষ বলেন, ওলা বাজার ছেড়ে কোন ব্যবসায়ী এই কৃষক বাজারে আসতে চাইছেন না। ফলে সরকারী টাকা খরচ করে তৈরী কৃষক বাজার বন্ধই পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা দূর্গাপুর, আসানসোল, বার্ণপুর, বরাকর সহ ভিন রাজ্যে এখান থেকে সব্জী রপ্তানি হচ্ছে। ওলা বাজারে সব ধরণের সব্জী পাইকারীহারে তারা পাচ্ছেন। ফলে কেউ ঐ কৃষক বাজারে যেতে রাজী নন। কৃষকটি বাজার ওলা গ্রামে করলে কৃষক-পাইকারী ক্রেতা সকলের সকলের সুবিধা হতো বলে তিনি মনে করেন।
এই বিষয়ে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ ডাঃ সুভাষ সরকার বলেন, এই রাজ্যে কৃষক বাজারের কথা উচ্চারণ করাই উচিৎ নয়। এই সরকারের কোন পরিকল্পনাই নেই। ‘টাকা পেলে সেই টাকা ভাগ করার জন্য যেখানে যা খুশি তৈরী করা হচ্ছে’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এই জেলায় সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে কৃষক বাজার গুলি তৈরী হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে ‘ঠিকাদার পরিচালিত সরকার’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্র মন্ত্রী অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরা ওন্দার ওলা বাজার থেকে কৃষক বাজারের দূরত্বে বেশ খানিকটা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাষীদের কৃষক বাজারে বসে ব্যবসা করার জন্য বার বার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী পুরাণো বাজার ছেড়ে ওখানে যেতে রাজী করাতে সমস্যা হচ্ছে। এলাকার চাষী ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনায় বসে ঐ কৃষক বাজার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি পর্যাপ্ত জমির অভাবে ওলা বাজাথের কৃষক বাজার তৈরী করা যায়নি। তাই ওখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে মূল রাস্তার ধারে তা তৈরী করা হয়েছে বলে তিনি জানান।