শয্যাশায়ী ভদ্রলোকের নাম জয়ন্ত বসু (৮৭)। ‘অঙ্কের জাদুকর’ কালীপদ বসুর নাতি। শনিবার ১২, মহেন্দ্র গোস্বামী লেনের এই বাড়িতে গিয়েছিলাম কিছু পুরনো কথার খোঁজে।
উত্তরপাড়ার ‘রাজা’ ক্ষেত্রনাথ মুখার্জির বাড়ির ঠিক বিপরীতে ‘কালীপদ নিকেতন’। ১০৬ বছর আগে তৈরি বাড়ি। ভিতরে দেওয়ালে বাঁধানো পুরনো ছবি, বংশলতিকা। জয়ন্তবাবুর কাছে শুনছিলাম তাঁর ঠাকুর্দার কথা। ১৮৮৮-তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যালজেব্রা’। ক্লাশ ইলেভেনে (সাবেক ফার্স্ট ইয়ারের) বই। টানা বাজারে চলেছে বছর ১০ আগে পর্যন্ত।
বাজারে অঙ্কের বইয়ের এমন কাটতি নাকি নজীরবিহীন। গোটা এশিয়া মহাদেশে তিনিই প্রথম অ্যালজেব্রাকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রথমে প্রেসিডেন্সি, পরে কটকের রাভেনশ, তার পর ঢাকা কলেজে বছর পঁচিশ পড়িয়েছেন। শেষে পড়াতেন রিপন কলেজে।
ঝিনাইদহ উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে জন্মান কে পি বসু। বাবার নাম মহিমাচরণ বসু। কে পি বসুর শিক্ষা জীবনের শুরু গ্রামের পাঠশালায়। আধুনিক অ্যালজাবরা’র অধ্যয়ন ও অনুশীলনের পথকে সুগম, প্রাঞ্জল ও সহজ করে তোলেন। অসংখ্য নতুন অংক উদ্ভাবন করে এ শাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধন করেন। অধ্যাপনার সাথে সাথে তিনি অ্যালজাবরা ও জ্যামিতির উপর নানা রকম গবেষণা চালিয়েছিলেন। ঐকান্তিক সাধনায় ‘অ্যালজাবরা মেড ইজি’ মডার্ণ জিওমেট্রি’ ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি’ প্রভৃতি বই লেখেন। প্রকাশনা শিল্পের প্রতিও তাঁর আগ্রহ ও মনোযোগ ছিল। তিনি কলকাতায় কে পি বসু পাবলিশিং কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন।
মেধা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের বলে তিনি প্রতিষ্ঠা অর্জন ও প্রভূত অর্থের মালিক হয়েছিলেন। ১৯০৭ সালে তিনি স্ব-গ্রামে প্রাসাদোপম এক ভবন তৈরি করান। ১৯১৪ সালে পার্নিসাস ম্যালেরিয়া জ্বরে ঢাকায় মারা যান। তাঁর মৃতদেহ ঝিনাইদহ এসে পৌঁছালে ঝিনাইদহের সব অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়। শোকাভিভূত হাজার হাজর মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নবগঙ্গা নদীর তীরে উপস্থিত হয়। ঝিনাইদহ শহরে তাঁর স্মৃতিতে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়।
ঠাকুর্দার চেয়েও ঠাকুমা মেঘমালা ঘোষের বিশেষ কিছু গুনের কথা জানালেন জয়ন্তবাবু। পরে কোনও সময়ে শোনাব তাঁর গল্প।