সোমবার দুপুরে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনুপম হাজরার সাক্ষাৎ নিয়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছে, তার জন্য কেষ্টবাবুকেই কাঠগড়ায় তুললেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
অনুপমকে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিজেপি রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুকুল। সেখানে তিনি বলেন, “নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। কিন্তু অনুপম তো জানতেন না, অনুব্রত প্রেস ডেকে রাখবে! উনি রাজনীতি করার জন্য এই কাজ করেছেন।”
সোমবার দুপুরে বোলপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে অনুপমের মাছ-ভাত দিয়ে লাঞ্চ সারা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। যদিও মঙ্গলবার অনুপম বলেন, “মাছ-ভাত খাইনি। আর ওটা লাঞ্চও ছিল না। প্রসাদ খেয়েছি। ওখানে মন্দির রয়েছে। প্রতিদিন ৫০-৬০জন ভোগ খান। আমিও সেটাই খেয়েছি।”
দুই অনুর সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়াতে বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। কাকা-ভাইপোর ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বামেরা সেই ছবির নীচে লিখে দিয়েছিল, যাদবপুরে তৃণমূলের ডামি ক্যান্ডিডেট। এরপর তড়িঘড়ি বঙ্গ বিজেপি-র নেতারা ঠিক করেন ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে সাংবাদিক সম্মেলন করানো হবে অনুপমকে দিয়ে। সঙ্গে থাকবেন মুকুল রায়। মঙ্গলবার দুপুরে বিজেপি রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে অনুপম বলেন, “একটা মৃত্যু নিয়ে যে এমন হতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি। কান দিয়ে দেখলে হবে না। চোখ দিয়ে দেখতে হবে।”
ভোটের দিন পনেরো আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের মা পুষ্পরানি মণ্ডল। অনুপম বলেন, সেই কারণেই ভোট দিতে গিয়ে একবার অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করতে যান। মিডিয়াকে কাঠগড়ায় তুলে অনুপম বলেন, “আপনারা কান দিয়ে দেখছেন। প্লিজ এটা করবেন না!”
কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তাই সাংবাদিক বৈঠকে যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থীকে জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনাকে যখন কাল অনুব্রত মণ্ডল বললেন, দিদিকে বলে রাজ্যসভার টিকিটের ব্যবস্থা করে দেব। ও চাইলে দলে ফিরিয়ে নেব। তখন তো কিছু বলেননি!” জবাবে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক বলেন, “ওঁর কী অওকাত যে আমাকে টিকিট দেবেন! উনি এমপি না এমএলএ? তাই জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।” এরপর অনুপম বলেন, “রাজ্যসভার টিকিট কি সিনেমার টিকিট নাকি? যেমন ইচ্ছে বিলি করে দেওয়া যায়?”
চোদ্দর ভোটে জেতার পর বছরখানেক সব ঠিক ছিল। তারপর থেকেই অনুব্রতর সঙ্গে বনিবনা চুকে যায় অনুব্রতর। ষোলর ভোটে সাংসদকে প্রচারেই ডাকেনি জেলা তৃণমূল। তারপর একের পর এক ফেসবুক পোস্ট আর টুইটে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন অনুপম। বাধ্য হয়ে ভোটের মাস আড়াই আগে অনুপমকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।
কিন্তু মজার কথা হল, ভোটের দুপুরে কেষ্টকাকার সামনে বসে অনুপম বলেছিলেন, “আমরা অনেক সময় কানে দেখে ফেলি। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। কাকুর সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।” স্নেহের সুরে অনুব্রত বলেছিলেন, “ও তো বোকামো করল। ও থাকলেতো ওঁকেই প্রার্থী করতাম! মুখ্যমন্ত্রীকে বলেও দিয়েছিলাম”
পর্যবেক্ষকদের মতে, অনুপম যতই রাজনীতিতে আনকোড়া হোন, এটুকু বোঝেন যে, বীরভূমের তৃণমূলে কেষ্ট মণ্ডলই শেষ কথা। তিনি কিছু বললে ফেরান না দিদিও। তার জন্য এমএলএ, এমপি হওয়ার দরকার নেই। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, যে ক্ষত কাল বোলপুরে তৈরি করে ফেলেছিলেন অনুপম, তাতে মলম লাগাতে এর থেকে বেশি আর কিছু করার ছিল না। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।