রাজ্য পুলিশের যে আইপিএস কর্তাকে ভিন্ রাজ্যে ভোটের দায়িত্বে পাঠিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার, নির্বাচন কমিশন তাঁকে ফিরিয়ে আনল বাংলায়। এবং একেবারেই নাটকীয় ভাবে। কাক পাখিকে টের পেতে না দিয়ে, প্রথম দফার ভোটের ঠিক ৪৮ ঘন্টা আগে।
কোচবিহার জেলার পুলিশ সুপার পদে ছিলেন আইপিএস অফিসার অভিষেক গুপ্ত। জেলার বিজেপি নেতারা তো বটেই, কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদেরও অভিযোগ ছিল, উনি রাজ্যের শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন। এমনকী গত ৭ এপ্রিল নরেন্দ্র মোদীর সভামঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় আগামী বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে ভোট হবে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার আসনে। তার আগে মঙ্গলবার রাতারাতি অভিষেক গুপ্তকে সরিয়ে দিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট অমিত সিংহকে ওই পদে বসিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু কে এই আইপিএস অফিসার অমিত সিংহ?
ভোটের সময় ভিন রাজ্যে পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সব সময়েই বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে অফিসারদের নামের তালিকা চায়। যাঁদের ডেপুটেশনে অন্য রাজ্যে পাঠানো হবে। এ বারও তেমনই হয়েছিল। অমিত সিংহকে ভোট পর্যবেক্ষক হিসাবে ডেপুটেশনে পাঠিয়েছিল নবান্ন। বিহারের আরারিয়ায় পুলিশ পর্যবেক্ষক করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কমিশন তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সোজা কোচবিহারের পুলিশ সুপার পদে নিয়োগ করে দেয়।
কমিশনের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। দলের তরফে কমিশনকে চিঠি লিখে ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, যে অফিসারের সম্পর্কে কোনও ধারনা নেই তিনি সেখানে কী ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখবেন? বরং অভিষেক গুপ্ত সেখানে ভাল কাজ করছিলেন।
কিন্তু বিজেপি-র পাল্টা অভিযোগ, কোচবিহারের স্পর্শকাতর বুথগুলিতে ঠিক মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেননি সদ্য প্রাক্তন পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত। জেলায় ৪৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মোট ২০১০ টি বুথ রয়েছে। তার মধ্যে ১০৬০ টি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছিলেন তিনি। বাকি ৯৫০ টি বুথে সিআরপিএফের কোনও জওয়ানকে মোতায়েন করা হয়নি। শাসক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই তিনি তা করেছিলেন বলে অভিযোগ বিজেপি-র।
অন্য দিকে কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, বিরোধীদের অভিযোগ পেয়ে কমিশন নিযুক্ত বিশেষ কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে নিরপেক্ষ ভাবে পুলিশ সুপারের ভূমিকা পর্যালোচনা করেন। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতেই অভিষেক গুপ্তাকে অপসারণ করা হয়েছে। শুধু তাই
নয়, রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অভিষেক গুপ্তাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ভোটের কোনও দায়িত্ব যেন দেওয়া না হয়।