মমতার বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ অমিত শাহর, এই প্রথম এতটা চড়া সমালোচনা বিজেপির

রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলেন—এমন দাবিই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরাবরের রাজনৈতিক পুঁজি। শনিবার সেই ধারণায় আঘাত করতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বোঝাতে চেয়েছিলেন, তৃণমূল জমানায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।

রবিবার আর কোনও আগল রাখলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এগরার সভা থেকে তিনি স্পষ্ট কথায় বলেন, ‘ভাইপোর কাটমানি যায় মমতাদিদির কাছে’। তিনি বোঝাতে চান, ভাইপো যে কাটমানি তোলের সেই টাকাই নেত্রীর কাছে যায়।

মোদী-অমিত শাহরা তাঁর দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যে সমালোচনা করছিলেন, তার জবাবও দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে সঙ্গত করছেন। মমতার কথায়, ‘দেশের সব থেকে তোলাবাজ ওরাই।’ তবে অমিত শাহ যখন তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ করছেন, তখন দিদি কী বলেন সেটা অবশ্যই দেখার।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দিদির পাঠশালায় তোলাবাজি, কাটমানি, সিন্ডিকেটই সিলেবাস। বাংলায় সিঙ্গল উইন্ডো হল ভাইপো উইন্ডো। রবিবার তারই মাইক্রো ডিটেলে গিয়েছেন অমিত শাহ।

এগরার সভায় তিনি বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন মাত্র ৫০০ টাকা নিলে এতো চিৎকার চেঁচামেচি করে। আরে মমতা দিদি পাঁচশ টাকা আপনার কাছে কিছু নয়। কারণ ভাইপোর কাটমানির টাকা মমতাদিদির কাছে যায়। কিন্তু গরিব খেটে খাওয়া মানুষের কাছে ৫০০ টাকাই অনেক। ৫ আনা পয়সাও যাবে কেন?

রাজ্যে প্রায় দশ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু তার মধ্যে গত ৬ বছর ধরেই উপর্যুপরি দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাসীন এই দল জেরবার। কখনও চিটফান্ড দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মন্ত্রী, সাংসদ, আমলাদের বিরুদ্ধে তো কখনও রেশনের চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া আমফানের টাকা লুঠ, কোভিডের সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। অনেকের মতে, সে সব চাপা দিতেই এ বারের ভোটে বাংলা ও বাঙালি আবেগে শান দিতে চেয়েছে তৃণমূল। যাতে সেই সব প্রতিষ্ঠানবিরোধী উপাদান ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী পাল্টা এটা বোঝাতে তৎপর যে তৃণমূল ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল। আর ব্যক্তিকেন্দ্রিক দলে উপরতলাই হোক বা নিচের তলা—প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত ছাড়া উপর্যুপরি দুর্নীতি হতে পারে না।

এদিন এগরার সভায় অমিত শাহ বলেন, বাংলার মানুষের সামনে এখন দুটো বিকল্প রয়েছে। এক—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাইপোকে মুখ্যমন্ত্রী বানাতে চাইছেন। সেটা মানুষ গ্রহণ করবে কিনা। আর দুই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাকে সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলতে চাইছেন, সেটা মানুষ চান কিনা। এ ছাড়া সপ্তম বেতন কমিশনের বাস্তবায়ন, শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির মতো প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.