অমিত শাহ কলকাতায় এসে গুগলি দিতে পারেন, নজর রাখতে হবে এনআরসি বৈঠকে

দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-কে সম্মেলন করার জন্য নবান্ন নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম দিতে রাজি হয়েছে এটাই বড় খবর। তাও কিনা আবার এনআরসি তথা জাতীয় নাগরিক পঞ্জির মতো বিষয় যে সম্মেলনের অ্যাজেন্ডায় রয়েছে!

তবে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সূত্রে খবর, পিকচার নাকি এর পরেও বাকি রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি-র কার্যকারণ নিয়ে অমিত শাহ বা বিজেপি নেতারা এ যাবৎ যে সব কার্যকারণ বলেছেন, তাতে নতুন আর কিছু নেই। তা অনেকেই ভালমতো জানেন। বরং ওই সূত্রের খবর, গুগলি দিতে পারেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি।

সেটা কেমন?

সম্মেলনের অ্যাজেন্ডা হল এনআরসি। কিন্তু অমিত শাহ মূলতই বক্তৃতা দিতে পারেন নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে। যে সংশোধন আইনের মূল বক্তব্য হল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান থেকে যে হিন্দুরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের কাছে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ডের মতো কোনও পরিচয়পত্র না থাকলেও অসুবিধা নেই। তাঁদের দেশ থেকে বা বর্তমান ভিটে থেকে কোনও ভাবেই উচ্ছেদ করে তাড়ানো হবে না। বরং তাঁদের হিন্দু শরণার্থী হিসাবে আখ্যা দিয়ে স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

এখন কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, এনআরসি নিয়ে ডাকা সম্মেলনে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ব্যাখ্যা করবেন অমিত শাহ?

এর জবাব জলের মতই তরল ও সরল। অসমে এনআরসি-র বাস্তবায়ন নিয়ে গোড়া থেকে তীব্র বিরোধিতা করছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, অসমে বাঙালি ও হিন্দুরাও বিপন্ন। সেই সঙ্গে বাংলার মানুষকেও তৃণমূল এনআরসি জুজু দেখাতে চাইছে। ওপার বাংলা থেকে যে হিন্দুরা দুই চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, হুগলি, মালদাহ, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার ইত্যাদি জেলায় বাস করছেন তাঁদের ভয় দেখিয়ে তৃণমূল বোঝাতে চাইছে বাংলাতেও এনআরসি করবে বিজেপি। আপনারা ভিটে মাটি ছাড়া হবেন। আর সেই কারণেই তিন রকমের রেশন কার্ড চালু করেছে মমতা সরকার। রেশন কার্ডকেও পরিচয়পত্র হিসাবে স্বীকৃতি দিতে চাইছে নবান্ন। জেলায় জেলায় আতঙ্কের পরিবেশ এতোটাই তৈরি হয়েছে যে, ব্লক উন্নয়ন অফিসের বাইরে রেশন কার্ডের জন্য লাইন পড়ছে।

কিন্তু অমিত শাহ এসে এই মানুষগুলিকেই বোঝাতে চাইবেন যে, আপনারা হিন্দু হলে ভয় নেই। আপনারা স্থায়ী নাগরিকত্ব পাবেন। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার আপনাদের সেই আইনি অধিকার দিতেই সংসদে বিল পাশ করাতে চলেছে।

এই প্রস্তাবের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদের বার্তা রয়েছে বলেই অনেকের মত। কারণ, এই বক্তব্যের মোদ্দা কথা স্পষ্ট। তা হল, বাংলাদেশ বা প্রতিবেশি দেশ থেকে যে মুসলিম সংখ্যালঘুরা ভারতে তথা বাংলায় এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। তাই এই বিল নিয়ে কংগ্রেস এরই মধ্যে আপত্তি তুলেছে। অধীর চৌধুরীরা আগেই বলেছেন, ধর্মীয় মেরুকরণের জন্যই বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করতে চাইছে। কিন্তু গণতন্ত্রে সংখ্যার তাকতটাই সব থেকে বড় শক্তি। লোকসভায় এখন বিজেপি-র একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। রাজ্যসভায় তা না থাকলেও প্রয়োজনে বন্ধু জুটিয়ে ফেলতে যে অমিত শাহদের বেগ পেতে হবে না তা সম্প্রতি ৩৭০ ধারা বাতিল প্রস্তাবের সময় ভোটাভুটিতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং বিশেষ বাধার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.