শনিবার মেদিনীপুরের মাঠে পৌঁছোনোর চার দিন আগে থেকেই নকশা তৈরি রয়েছে। এ যাত্রায় মেদিনীপুর। জানুয়ারিতে হাওড়া। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে হাওড়ায় জনসভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা।
বিজেপির কেন্দ্রীয় সূত্রের দাবি, হাওড়ার ওই সভায় মেদিনীপুরের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কে, কেন, কত জন—সে বিষয়ে অবশ্য বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব নীরব।
শনিবার মেদিনীপুর থেকে ফেরার পর নিউটাউনের হোটেলে অমিত শাহ রাজ্য নেতা ও কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দু’দিন করে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসবেন। একই ভাবে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা আসবেন দু’দিন করে। মার্চ মাসে দু’দফায় রাজ্যে এসে চার দিন সফরের পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির সর্বোচ্চ সারির এই দুই নেতার। তার পর এপ্রিল মাসে অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে এসে পনেরো দিন থাকতে পারেন বলে একটি সূত্র দাবি করছে। এমনকি এও খবর, হোটেল নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর জন্য কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া করা হতে পারে।
রাজ্য বিজেপির এক নেতা মঙ্গলবার বলেছেন, একটা বিষয় একটু ভেবে দেখার মতো। তা হল, শনিবার মেদিনীপুরের সভায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কমবেশি সব জেলা থেকে বিধায়ক বা নেতা বিজেপিতে সামিল করিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই বাদ ছিল হাওড়া ও নদিয়া। সেটা কি অর্থবহ নয়!
তাঁর কথায়, “এমনিতে দলের মধ্যে আশা রয়েছে, আগামী দিনে শুভেন্দুর পথ অনুসরণ করে তৃণমূল থেকে আরও কিছু ভাল লোক বিজেপিতে আসবেন। যাঁদের ভাবমূর্তি রয়েছে, মানুষের সঙ্গে যাঁরা বিচ্ছিন্ন নন এবং স্থানীয় স্তরে যাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা নেই।”
বিজেপির ওই নেতা আরও জানান, দল যে তৃণমূল থেকে খুব বেশি সংখ্যায় বিধায়ক ভাঙাতে আগ্রহী, তা নয়। কারণ দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা হল বহু বিধায়কের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্তরে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা রয়েছে। তাঁরা যে দলেই যান না কেন জয়ের সম্ভাবনা কম। সুতরাং তাঁরা বিজেপিতে এলে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, ওই সব বিধায়কদের তৃণমূলও এবার টিকিট না দিতে পারে। তাতে শাসক দলে অন্তর্কলহ মাথা চাড়া দিতে পারে। তা বিজেপির জন্য মন্দ নয়। এ কথা বলতে গিয়ে, সর্বভারতীয় বিজেপির এক নেতা ২০০৭ সালে গুজরাত ভোটের উদাহরণ দেন। ওই ভোটে সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের প্রায় বারো আনা বিধায়ককে প্রার্থী করেননি নরেন্দ্র মোদী। গোবর্ধন ঝারাপিয়ার নেতৃত্বে সেই বিধায়করা কংগ্রেসে যোগ দিয়ে টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের টিকিট থেকেও জিততে পারেননি। কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভাবে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছিল।
ফলে বিধায়কদের মধ্যে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিতে চাইছেন, বিজেপি তাঁদের ব্যাপারে দুটো বিষয় খতিয়ে দেখছেন। এক ওই বিধায়কের জনভিত্তি বা জনপ্রিয়তা কতটা। তিনি কতটা প্রভাবশালী। দুই, সেখানে বিজেপির সংগঠন কেমন, টিকিট প্রত্যাশী কতজন, বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে গ্রহণ করে নেওয়ার মানসিকতাই বা কতটা।
তবে এই সব সাত সতেরো অঙ্কের বাইরে আপাতত নজর অবশ্যই থাকছে হাওড়ার উপর। জানুয়ারির গোড়ায় সেখানে সম্ভাব্য যোগদান মেলার কথা ভেবে এখন থেকেই অনেকের মনে হয়তো ছবি আঁকা চলছে।