৯ ডিসেম্বর ২০১৯
● এই প্রথম কোনও সরকার যে, নাগরিকত্ব দেবার সিদ্ধান্ত নিলো তা নয়। ১৯৭১ সালেও ইন্দিরা গান্ধী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে যারাই ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে আশ্রয় নেবেন, তাদেরই নাগরিকত্ব দেবেন। ঐ সময়ে কেনই বা পাকিস্তান থেকে আগত অত্যাচারিতদের নাগরিকত্ব দেওয়া হল না? স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পরেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়মিত ভাবে বিপুল মাত্রায় সংখ্যাগুরুদের কাছে অত্যাচারিত হয়েই আসছে; যেমনটা আগেও হত। কংগ্রেস সরকার উগান্ডা থেকে ভারতে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন, কিন্তু ব্রিটেন থেকে আসা সংখ্যালঘুদের দেন নি। কেন? এর পেছনে যেসব যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে, তা ধাপে ধাপে বলছি।
● আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে তিন দেশের সংবিধানে কি লেখা আছে, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে এই বিলের উদ্দেশ্য বুঝতে। আফগান সংবিধানের ২ নং ধারায় পরিষ্কার বলা আছে সেদেশের রাষ্ট্রধর্ম হল ইসলাম। একই ধরণের সাংবিধানিক ধারা আছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংবিধানেও।
● দেশভাগের সময়ে উদ্বাস্তুরা বাধ্য হয়েছিল দেশ ছাড়তে। ১৯৫০ সালে নেহেরু লিয়াকৎ চুক্তি সম্পাদনের সময়ে দুই দেশই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা সেদেশে থাকা সংখ্যালঘুদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে। দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, পাকিস্তান এই প্রতিশ্রুতি অদ্যাবধি পালন করেন নি। এই বিল শুধুমাত্র নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য তৈরি হয়েছে, ভারতে থাকা কোনও মুসলমান নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবার জন্য তৈরি হয়নি; এইরকম অপপ্রচার বিরোধীদের তরফে করা হচ্ছে।
● যদি কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না হতে দিত, তাহলে এই বিল আনার দরকারই পড়ত না। দোষটা তাদের, আমাদের নয়।
● যদি কোনও মুসলিম ব্যক্তিগত ভাবে ভারতের কাছে নাগরিকত্ব চান, আমরা খোলা মনে তার বিচার করব; যেমনটা আগেও করেছি। এখানে মনে রাখা দরকার উক্ত তিন দেশে যেহেতু মুসলিমরাই সংখ্যাগুরু, তাই ধর্মীয় কারণে তাদের নির্যাতিত হবার প্রশ্নই আসে না। আমি দুই কক্ষের সাংসদদের আশ্বস্ত করছি এই বলে এই বিল সত্তর বছর ধরে যারা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের ন্যায় বিচারের জন্য আনা হয়েছে; এই বিল কাউকে বঞ্চিত করার জন্য তৈরি হয়নি।
● আমি বিশ্বাস করি যে, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারের ভিত্তিতে নির্বাচন লড়া উচিত। নির্বাচনী ইস্তাহারটি দেশের মানুষের মতামতের ওপর তৈরি হয়, কোনও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থ পূরণের জন্য নয়। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। এখানে মনে করিয়ে দিচ্ছি, বিজেপীর তরফে ২০১৪ ও ২০১৯ লোকসভার নির্বাচনে এই বিল পাশ করাবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এই বিল পাশ হলে কয়েক কোটি ভারতে থাকা শরণার্থী বহুদিন ধরে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে আর নাগরিকের সম্মান পাবে। আর সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
● এবার পরের প্রসঙ্গে আসি। প্রত্যেক দেশের লক্ষ্য থাকে অন্য দেশ থেকে অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য। আমরা ভারতকে ধর্মশালা বানাইনি। প্রত্যেক দেশই আইন বানায় তার নাগরিকদেরকে রক্ষা করার জন্য, আমরাও সেটাই করছি। আমাদের সরকারের দায়িত্ব আছে সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখার, অনুপ্রবেশকারীকে আটকে দেওয়ার, এবং সঠিক ভাবে অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে নেওয়ার। প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব আইন আছে, যার জোরে বিদেশিরা সেদেশে নাগরিকত্ব পায়। ভারতে ছিল না। এবার সেটাও হয়ে গেল।
● ১৯৭১ যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পর সেখান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়, এবং আমাদের পার্টি বা অন্য কেউ এর বিরোধিতাও করেনি। কোটিরও বেশী মানুষ বহুকাল ধরে নরক যন্ত্রণা সহ্য করছে। আমি বাংলার ও কংগ্রেসের সাংসদদেরকে চ্যালেঞ্জ করছি; তাঁরা প্রমাণ করুন এতে পক্ষপাতিত্ব কোথায় পাচ্ছেন?
● এই বিলের আওতা থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের অধিকাংশ রাজ্যকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এতে কারুর ভয় পাবার কোনও কারণ নেই। নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে এই জন্যই ইনার লাইন পারমিট চালু হচ্ছে। মণিপুর ও মেঘালয়েও ইনার লাইন পারমিট চালু করছি। অবশ্য মেঘালয় আগে থেকেই সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুসারে সুরক্ষিত আছে।
● আমি এ ব্যাপারে ১১৯ ঘণ্টা ধরে একশো চল্লিশের বেশি এনজিও, পলিটিকাল পার্টির প্রধান, এবং বহু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছি। তাঁদের মতামত নিয়েই এই বিল তৈরি হয়েছে।
● কিছু সাংসদ অভিযোগ করেছেন যে এই বিল নাকি অসাংবিধানিক, কেননা তা ১৪ নং ধারা ভঙ্গ করেছে। আমি তাদের আশ্বস্ত করছি এই বিল কোনও ভাবেই সংবিধান ভঙ্গ করছে না। এই বিল সংবিধানের ১৪, ২১ বা ২৫ নং ধারার কোনোটাই ভাঙ্গছে না। সংবিধান মেনেই বিল তৈরি হয়েছে।
● যাঁরা ধর্ম রক্ষা করতে, কিংবা তাঁর মা-বোন-কন্যাদের ইজ্জত রক্ষা করতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদান না করার ভুল করবেন না। আমরা অবশ্যই তাদের সাদরে গ্রহণ করে নাগরিকত্ব দান করে সারা বিশ্বের কাছে তাদের সম্মানিত করব।
● এখানে সংখ্যালঘুত্বের ব্যাপারে কোনও দ্বিমতের অবকাশ নেই। এই বিল মাত্র তিনটে দেশের (আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিচ্ছি। এখানে মনে রাখতে হবে ঐ তিন দেশেরই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলে সেখানে মুসলমানেরা সংখ্যালঘু হতে পারেন না।
● এই তিন দেশেই প্রচুর মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে। ১৯৯২ সালে যেখানে ২ লাখ হিন্দু, শিখ ধর্মস্থান ছিল আফগানিস্তানে, সেখানে এখন মাত্র ৫০০ আছে। পুরো দেশটাই অমুসলিমদের ধর্মস্থান ভেঙ্গে দেওয়ার লীলাখেলায় মেতে উঠছে। এমনকি শ্রীবুদ্ধের মূর্তিও কামানের গোলার আঘাতে নিপাতিত হয়েছে। তা আফগান সংখ্যালঘু শরণার্থীরা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবেন?
● সংসদের মাধ্যমে আমি সমগ্র দেশকে এই বার্তা দিতে চাই যে শরণার্থী আর অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে এক মৌলিক প্রভেদ আছে।
● নেহেরু লিয়াকৎ চুক্তির ঐতিহাসিক ভুল এই বিলের মাধ্যমে সংশোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদী।