স্বাধীনতার ৫০ বছর পূরণ করেছে বাংলাদেশ। একাত্তরের স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে হয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদির কারণে শঙ্কিত ছিল সেই দেশের মানুষ। আমেরিকার প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জর সেই সময় ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, এমন একটা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু, তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরা নির্ধারণ করতে পারবে না।
বাংলাদেশকে বারবার চিন্তায় ফেলেছে সেই দেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা। কারণ, সেদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। আর তা আরও মারাত্মক হয়েছে সম্প্রতি। কয়েকদিন আগে দুর্গাপুজোয় মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে মূর্তি। বাংলাদেশে অশান্তিতে গ্রেফতার ৪৫০। অশান্তির প্রতিবাদে সমাবেশ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের।
দুর্গাপুজোর সময় থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার এবং মন্দির ভাঙ্গচুরের প্রতিবাদে আজ কলকাতায় বড়সড় বিক্ষোভ সমাবেশ করল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। রানী রাসমণি রোডে এই সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ হিন্দুদের প্রাণ এবং ধন সম্পত্তি রক্ষার আবেদন জানানো হয়।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলাকে গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে এক প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলাকে নাৎসি হামলার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এদিন প্রবল বর্ষণের মধ্যে সভায় ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। প্রতিবাদ সভা আয়োজনের পাশাপাশি এদিন বাংলাদেশের উপ-রাজদূত ও রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেখানেও হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধে পদক্ষেপ করার দাবি তোলা হয়েছে। আজ বাংলাদেশ বিষয়ে রানী রাসমণি রোডে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকা প্রতিবাদ সভায় উত্থাপিত বিষয় গুলি ছিল :
১* ১৯৫১সালে বাংলাদেশে হিন্দুদের জনসংখ্যার হার ছিল ২২% যা আজ মাত্র ৮%। পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের জনসংখ্যার হার ১৮ % ছিল ১৯৫১ সালে যা আজ প্রায় ২৮%।
এটি প্রমাণ করে যে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানরা কোনও রকম বৈষম্যের মুখোমুখি হয়নি।তাহলে বাংলাদেশের হিন্দুরা সেখানে সন্ত্রাসের রাজত্বের মুখোমুখি হবে কেন?
২* ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন যা প্রেম এবং সংবেদনশীলতার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়। তাহলে কেন বাংলাদেশে এমন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনকে বর্বর আক্রমণের মুখে পড়তে হল ?
কেন অসংখ্য হিন্দু মন্দির এবং হিন্দু দেবতাদের ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়? পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে এরকম কোন ঘটনা নেই যা প্রমাণ করে যে তাদের সঙ্গে কখনও কোনও বৈষম্য হয়েছে।
৩* হিন্দু নারী ও শিশুরা হামলাকারীদের থেকে রেহাই পায়নি, এর জন্য আন্তর্জাতিকমহলের মনোনিবেশ প্রয়োজন এবং আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের একই ধরনের সহায়তা দিতে, যেমন ভারত সরকার আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের বিপদে পড়ার সময় দিয়েছে।
৪* ১৯৪৭ সালে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে স্পষ্টভাবে জনবিনিময়ের বিষয়টি তুলে ধরুন। দেশভাগের সময় থেকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একটার পর একটা ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি সঠিক এবং বাস্তববাদী।
৫* এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে CAA কতটা প্রাসঙ্গিক। কারণ বাংলাদেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের পাশে নিরাপদ নয়।
আমাদের অবশ্যই জানা উচিত ২৪% মুসলমান অবিভক্ত ভারতের ২৬% জমি নিয়ে পাকিস্তান বানিয়েছে।
৬* হিন্দু সম্পত্তি লুট করা হয়। হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হিন্দু জনগণকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এত কিছুর পরও ইউএনও চুপ থাকতে পারে কিভাবে? আমরা দাবি করছি ইউএনও -র একটি পর্যবেক্ষক দল অবিলম্বে বাংলাদেশে পাঠানো হোক।
৭* আমরা ভারত সরকারের কাছে দাবি করছি যে, সংসদ সদস্যদের একটি দল বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।
৮* আমরা বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের জন্য নগদ এবং সকল প্রকার পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করি।
৯* আমরা দাবি করি প্রত্যেক অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হোক এবং তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
১০* আমরা হতভম্ব এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি যে, সেই উদার হৃদয়ের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা যারা ফিলিস্তিন, নিকারাগুয়া এবং ভিয়েতনামের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। অথচ তারা বলছে এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই তারা চুপ থাকছে। তাদের বলার কিছু নেই! প্যালেস্টাইন, নিকারাগুয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাহলে নাক গলান কেন?
১১* আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করি যে, মূলধারার বাংলা মিডিয়ার কিছু অংশ বাদ দিয়ে কিভাবে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের খবর দমন করার চেষ্টা করেছে এবং কল্পিত ছদ্ম যুক্তি দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের মত সাম্প্রদায়িক অপরাধকে আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের জীবনের মূল্যে তারা তাদের রাজনৈতিক আভিসন্ধি পূরণ করার চেষ্টা করেছে। এখন এটা প্রকাশ পেয়েছে যে তারা নিরপেক্ষ নয় বরং রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত বুদ্ধিজীবী।
১২* আমরা হতবাক হয়ে গেছি কিভাবে তথাকথিত ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদরা নির্বাক দর্শক হয়ে থাকতে পারে। তারা বিশেষ এক রাজনৈতিক দলের ২৮% ভোট ব্যাঙ্ক রক্ষার জন্য সনাতন হিন্দুদের উপর নেমে আসা সন্ত্রাস নিয়ে দিব্বি চুপ। বিষেশ সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশের হিন্দুদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে চুপ থেকে এরা প্রমাণ করে যে এই ধরনের মানসিকতা পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে যা ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশে পরিণত করতে পারে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে এদিন কালকাতার তিনটি এলাকা থেকে মিছিল করে রানী রাসমণি রোডে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই অনুমতি না মেলায় মিছিল বাদ দেওয়া হয়। এই সমাবেশে বিজেপির বেশকিছু নেতা-নেত্রীকে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ছিলেন বিজেপির মহিলা মোর্চার সম্পাদিকা তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, ময়নার বিধায়ক অশোক দিন্দা, বিজেপির সর্বভারতীয় নেত্রী ভারতী ঘোষ, রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। এই বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন আরএসএসের ক্ষেত্র সংঘ চালক অজয় কুমার নন্দী, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ক্ষেত্র সম্পাদক অমিয় কুমার সরকার এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় সহ-সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ। সভাশেষে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন এবং রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা সৌরিশ মুখার্জি বলেন এই প্রতিবাদ কর্মসূচি তাদের আগামী দিনে আরও জোরদার হবে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে তারা বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার দাবিতে সরব থাকবেন।
বাংলাদেশের অশান্তির প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে আজ সারাদিনই বিজেপির বিক্ষোভ চলছে। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল এদিন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অভিযোগ, দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর যে হামলার হয় তখন প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ বাংলাদেশ এত বড় ঘটনা ঘটে গেলেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তথাকথিত বড় অংশের বুদ্ধিজীবী মহল। অথচ অন্যান্য ঘটনা নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন তারা, ও সময় অসময়ে পথে নেমে প্রতিবাদও জানান। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর এই বর্বরোচিত হামলার জন্য এরাজ্যের হিন্দুরা আঘাতপ্রাপ্ত। তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারকে উত্তেজনা প্রশমনে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন।
আগামী ২৩ অক্টোবর বিশ্ব জুড়ে ১৫০ র বেশি দেশে ইসকন সংস্থার সদস্যরা প্রতিবাদে সামিল হবেন বলে জানা গেছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ।
বাংলাদেশ নিয়ে মিডিয়া চুপ কেন? প্রশ্নটা আসছে বারবার।কি বিরক্তিকর ব্যাপার,তাই না? আসলে হিন্দু নিধন নিয়ে চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। কি দরকার ওসব লিখে?