রোগের নাম ‘অ্যাকিউট নিউরো এনসেফ্যালোপ্যাথি’। করোনা রুখতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা যে টিকা বানাচ্ছে, তা নিয়ে এক ব্যক্তির শরীরে ওই রোগ দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। ভারতের জন্য অক্সফোর্ডের টিকা তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ওই সংস্থা গত ১ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে চেন্নাইয়ের এক বাসিন্দার দেহে ওই টিকা দিয়েছিল। অভিযোগ, এর পরেই ওই ব্যক্তি গুরুতর স্নায়ু ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর তরফে একটি ল ফার্ম সেরাম ইনস্টিটিউটকে চিঠি দিয়ে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
করোনা রুখতে বিশ্ব জুড়ে যে ক’টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে, তার মধ্যে এগিয়ে আছে কোভিশিল্ড। ওই ভ্যাকসিনের ১০০ কোটি ডোজ তৈরির জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সেরাম। ওই সংস্থাকে আইনি চিঠি পাঠিয়েছে ল ফার্ম রো অ্যান্ড রেড্ডি। চিঠিতে বলা হয়েছে, চেন্নাইয়ের যে ব্যক্তির দেহে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল, তিনি মোটেই ভাল নেই। তাঁকে দীর্ঘসময় চিকিৎসাধীন থাকতে হবে।
সেরাম বাদে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর), ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া, এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার সিইও-কে। ওই ব্যক্তিকে শ্রী রামচন্দ্র হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সংস্থায় ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। সেই সংস্থার এক কর্তাকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আইনি নোটিশে লেখা হয়েছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ওই ব্যক্তির মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। তাঁকে সাতদিন হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকতে হয়েছিল। তিনি এখন ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সেজন্য নোটিশ পাওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যে তাঁর পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিত।
একইসঙ্গে নোটিশে বলা হয়েছে, ওই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা এবং উৎপাদন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। অভিযুক্ত সংস্থা যদি এর পরেও ওই ভ্যাকসিন তৈরি করতে থাকে তাহলে আইনের সাহায্য নেওয়া হবে।
অভিযোগকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আর রাজারাম বলেন, “আমরা যাঁদের নোটিশ পাঠিয়েছি, তাঁরা কেউ এখনও জবাব দেননি। এই অবস্থায় আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা আইনি লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছি।”
শনিবারই পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্ল্যান্টে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভ্যাকসিন তৈরির কাজ কতদূর এগিয়েছে, তা নিয়ে খোঁজখবর নেন। সংস্থার প্রধান আদার পুনাওয়ালা এদিন মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তিনি বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য আর দু’সপ্তাহের মধ্যে আবেদন করবে সেরাম।
আদার পুনাওয়ালার কথায়, “এখনও পর্যন্ত আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি ভারত সরকার কতগুলি ডোজ কিনবে। কিন্তু যতদূর ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ কোটি ডোজ কেনা হবে।” এর পরেই তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে সেজন্য আবেদন জানানো হবে।