মঙ্গলবার দুপুরে কালীঘাটের বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ৪২টি কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর কোচবিহারের প্রার্থীর নাম দেখে তৃণমূলের অনেকেই চুপিসারে বলতে শুরু করেছেন, একজনের প্রাপ্তি যোগ লেগেই রয়েছে। অন্য জনের হারানোর।
পরেশ অধিকারী আর পার্থপ্রতিম রায়। পার্থকে সরিয়ে এ বার উত্তরবাংলার এই আসনে মমতা টিকিট দিয়েছেন প্রাক্তন বাম নেতা পরেশ অধিকারীকে।
এক সময় তিনি ছিলেন উত্তরবঙ্গের বাম আন্দোলনের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন খাদ্য দফতরেরও। কিন্তু কোচবিহারের সেই পরেশ অধিকারী কয়েক মাস আগেই নাম লিখিয়েছিলেন তৃণমূলে। শুধু নাম লেখানো তো নয়, শিবির বদলাতেই প্রাপ্তি যোগ হয়েছিল তাঁর। বাঘ আঁকা লাল পতাকা ছেড়ে তৃণমূল ভবনে এসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে জোড়া ফুলের পতাকা তুলে নিয়েছিলেন একদা ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ। আর বাংলার শাসক দলে যোগ দেওয়ার বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে কোচবিহারের স্কুল সার্ভিস কমিশনের মেধাতালিকায় ম্যাজিক দেখিয়ে দিয়েছিলেন স্বল্প উচ্চতার এই নেতা।
চুপিচুপি, নিঃশব্দে স্কুলের দিদিমণি হয়ে গিয়েছিলেন অঙ্কিতা। অঙ্কিতা পরেশবাবুর মেয়ে। হাইকোর্টের নির্দেশে মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছিল। কোচবিহারের কে কে চাকরি পাবেন, তার যে প্রথম তালিকা বেরোয় তাতে দেখা গিয়েছিল ওয়েটিং লিস্টের এক নম্বরে নাম রয়েছে ববিতা বর্মনের। এক দিনের মধ্যেই ববিতার নাম এক থেকে চলে যায় দুইয়ে। দুইয়ে যিনি ছিলেন তাঁর নাম চলে যায় তিনে। আর এক্কেবারে উপরে উঠে আসে পরেশ-কন্যা অঙ্কিতার নাম। অভিযোগ, অঙ্কিতার নাম মেধাতালিকাতেই ছিল না। এ খবর সবার প্রথম দ্য ওয়াল-এই প্রকাশিত হয়েছিল। হইহই পড়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু অঙ্কিতা স্কুলের চাকরিতে যোগ দিয়ে ফেলেছেন। অনেকে রসিকতা করে বলেছিলেন, পরেশবাবু বামফ্রন্টে থাকার সময়ে মানুষের নাম রেশন কার্ডে তোলার ব্যবস্থা করতেন, আর এখন তৃণমূলে গিয়ে নিজের মেয়ের নাম এসএসসি-র লিস্টে তুলে দিয়েছেন। সে দিন যেমন কন্যার চাকরি প্রাপ্তি হয়েছিল, আজ কার্যত আরও বড় প্রাপ্তি হয়ে গেল তাঁর। টিকিট দিয়ে দিয়েছেন দিদি। জিততে পারলেই দিল্লি।
পার্থপ্রতিম রায়কে এ বার প্রার্থী করা হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেন তৃণমূলনেত্রী। তবে মমতা জানিয়েছেন, দলে থাকলে তাঁকে অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “অনেকে টিকিট না পেলে এ দিক ও দিক করেন। গদ্দারি করলে করবে। একটা গদ্দার তো ছিল। আরও হলে হবে।” পর্যবেক্ষকদের মতে, দিদির এ কথা অমূলক নয়। কারণ ক’দিন ধরেই জল্পনা, পার্থপ্রতিম নাকি বিজেপি-র দিকে পা বাড়াচ্ছেন। সেই জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছিলেন একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ম্যান তথা অধুনা বিজেপি নেতা মুকুল রায়। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার ঘণ্টা দুয়েক পর কোচবিহার থেকে পার্থ বলেন, “দিদিই আমার আদর্শ। আমি পেশায় শিক্ষক। নীতিগতভাবেই আমি এ দিক ও দিক করব না। তৃণমূলে ছিলাম। তৃণমূলেই থাকব।”
এমনিতেই কয়েক বছর ধরে কোচবিহার জেলায় তৃণমূলের প্রতিপক্ষ তৃণমূলই। মাদার-যুবর কোন্দল নিয়ে নাজেহাল তৃণমূল। বারবার সাবধান করেছেন মমতাও। কিন্তু কোনও হেলদোল ছিল না জেলা নেতাদের। গত পঞ্চায়েত ভোটেও দলীয় কোন্দলে ব্যাপক হিংসা হয়েছে কোচবিহারে। এখন দেখার প্রার্থী বদল করে তৃণমূল কোচবিহার আসন ধরে রাখতে পারে কি না।