মহার্ঘ ভাতা: বাম জমানাকে সার্টিফিকেট স্যাটের, অস্বস্তিতে তৃণমূল

মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের (স্যাট) রায় শুধু সরকারের কোষাগারের উপর চাপ পড়ল না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার তথা তৃণমূলকে তা তীব্র অস্বস্তির মধ্যেও ফেলে দিল।

এদিন রায় ঘোষণার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব বামপন্থীরা। বাম কর্মচারী সংগঠনগুলিও সরব। স্টেট স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদ সঙ্কেত চক্রবর্তী বলেন, এই রায়ে প্রমাণ যে বাম সরকার সঠিক ভাবে ডিএ দিয়েছে।

স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল তথা স্যাটের দুই বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ এবং সুবেশ দাস এ দিন স্পষ্টতই বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রের নিয়মেই মহার্ঘ ভাতা পেতেন। যত অনিয়ম, তা শুরু হয় ২০১১ সালের পর থেকে। ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলায় বামেরাই ক্ষমতায় ছিলেন। স্যাটের বিচারপতিদের কথায়, ততদিন পর্যন্ত বছরে দু’বার নিয়ম করে ডিএ পেতেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। সর্বভারতীয় মূল্য সূচকের ভিত্তিতেই ডিএ দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১১ সালের পর ডিএ কী হারে দেওয়া হবে তা যেমন ঠিক ছিল না, তেমনই বছরে দু’বার মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার নিয়মও মানতে চায়নি।

বিরোধীদের বক্তব্য, স্যাটের এই মন্তব্য বাংলার বর্তমান শাসক দলকে বেআব্রু করে দিয়েছে। তাঁদের কথায়, কর্মচারীরা নিশ্চয়ই ভুলবেন না যে, এ ব্যাপারে খোদ মুখ্যমন্ত্রী নানা সময়ে যে মন্তব্য করেছেন তা একপ্রকার কালোত্তীর্ণ। কখনও বলেছেন, “ঘেউ ঘেউ করবেন না। তা হলে কিছুই দেব না। যখন ডিএ দেওয়ার তখন দেব।” আবার দু’দিন আগে একুশ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বলেছেন, “যাঁরা কেন্দ্রের হারে বেতন চান, তাঁরা কেন্দ্রে চলে যান। কেন্দ্রে থাকলে কেন্দ্রের মতো পাবেন, রাজ্যে থাকলে রাজ্যের মতো”।

মহার্ঘ ভাতা ও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন নিয়ে গোটা রাজনৈতিক তর্ক যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তা আঁচ করে শুক্রবার প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আট বছর আগে মাসের ১ তারিখ মাইনে হতো? ওই তো দু’শ-চারশ টাকা মাইনে দিত। আট বছরে রাজ্যকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছি।

রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের কারণেই যে তিনি মাইনে বাড়াতে পারছেন না, সে কথাও পুনরায় বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। বলেন, দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো বাম সরকার ঋণ নিয়েছিল। বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০০৬-০৭ সালের সময় থেকে। তারই খেসারত এখন বর্তমান সরকারকে দিতে হচ্ছে। এ বছরই ৫৬ হাজার কোটি টাকা সুদ বাবদ দিতে শোধ করতে হবে।

তৃণমূলের একাংশ নেতার মতে, ডিএ বৃদ্ধি এবং ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ ঘোষণার ব্যাপারে আগেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল সরকারের। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব আশা করেছিল, আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এই ঘোষণা করবে এবং তার রাজনৈতিক ফায়দা নেবে। কিন্তু প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের এই রায়ের পর তৃণমূলের পক্ষে আর রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুযোগ বিশেষ রইল না। বরং কর্মচারীরা বলবে, আদালতের গুঁতোয় সরকার ডিএ বাড়াতে বাধ্য হল।

তৃণমূল নেতাদের আশঙ্কা কেবল এখানেই থেমে নেই। বরং ভয় দেখাতে শুরু করেছে বিজেপি। অমিত শাহ-রা বলছেন, বাংলায় ক্ষমতায় এলে তাঁরা মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সপ্তম পে কমিশন গঠনের ঘোষণা করে দেবেন। ত্রিপুরায় ইতিমধ্যে তা করেছে বিজেপি। সেখানে সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশ লাগুও হয়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে গোটা ঘটনায় তৃণমূলের হাতে আর কিছু রইল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.