দিন কয়েক আগে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা এলাকায় একটি গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সাতগাছিয়া বিধানসভার এলাকার মোষগোট ও বিবিরহাট মোড়ের মধ্যবর্তী নহাজারি অঞ্চলের বগাখালিতে। ঘটনায় প্রকাশ, বিদ্যুতের খুঁটি পোতাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় গণ্ডগোলের সূত্রপাত। যার প্রভাব নাকি ডায়মন্ড হারবার লোকসভার নির্বাচনেও পড়তে পারে। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদ ভাইপোর যুব বাহিনীর দাপটে পুরনো তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের বসে যাওয়াও এই নির্বাচনে নজর কেড়েছে রাজনৈতিক মহলের।
রাত পোহালেই রাজ্যের বাকি সাত কেন্দ্রের মতো এখানেও ভোট হবে। এই কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও তৃণমূলের প্রত্যাশী। অপরদিকে, সিপিএমের ফুয়াদ হালিম, বিজেপির নীলাঞ্জন রায় ও কংগ্রেসের সৌম্য আইচ রায় ময়দানে রয়েছেন। গত তিন বছরের সময়ের ব্যবধানে সিপিএমকে পিছনে ফেলে বিকল্প বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি মাথাচাড়া দিয়েছে। তাই রাজনৈতিক মহলের ধারণা ডায়মন্ড হারবারে এবারের ভোটে লড়াই হবে অভিষেক বনাম নীলাঞ্জনের।
ঘটনাচক্রে এই কেন্দ্রে প্রচারে নেমে বারবার বাধা পেয়েছেন সিপিএমের চিকিৎসক প্রার্থী ফুয়াদ হালিম ও বিজেপির আইনজীবী প্রার্থী নীলাঞ্জন রায়। অভিযুক্ত হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু বাংলার শাসক দল অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা জানিয়েছে জনবিচ্ছিন্ন এই দুই রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষের হাতেই আক্রান্ত হয়েছেন। নীলাঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ উঠেছে কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের। ডায়মন্ড হারবারবাসীদের কোথায় এমন অভিযোগ ভোটে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। কারণ রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে সব সময় সত্য হয় না তা ভালই বোঝেন এই এলাকার মানুষজন।
এই কেন্দ্রে ৩৪ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের পুত্র বামফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে সংখ্যালঘু এলাকাকে নিজের প্রচারের মূল কেন্দ্রবিন্দু করেছিলেন। আর তার জেরেই তার ওপর শাসকদলের হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম নেতৃত্ব। তাদের দাবি সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়েই সিপিএম প্রার্থীর ওপর হামলা করেছে তৃণমূল। বিজেপির আবার অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ভোটে ডায়মন্ড হারবার লোকসভার ৯০ শতাংশ আসনে ভোট হয়নি। ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া, বজবজ বিষ্ণুপুর এলাকায় পঞ্চায়েত ভোট কেন হয়নি, তা জানে গ্রামীণ জনতা। কিন্তু এবারের ভোটে মানুষ ঠিক ঠিক ভোটদানের সুযোগ পেলে পঞ্চায়েতে ভোট না দিতে পারার ক্ষোভ সুদে-আসলে পুষিয়ে দেবে বলেই দাবি করছে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি।
ডায়মন্ড হারবারের লড়াইয়ে সব থেকে পিছিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী সৌম আইচ রায়। প্রচারে তো বটেই, তার নাম এই লোকসভা কেন্দ্রের কোথাও খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে না। এই কেন্দ্রে প্রচারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য শুভাশিস চক্রবর্তী তো বটেই, এই কেন্দ্রে রাজ্যের মন্ত্রীরা প্রচারে এসেছেন বিনা ডাকেই। অথচ ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ফলতার বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ, ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদার, সাতগাছিয়ার বিধায়ক সোনালী গুহদের খুব বেশি প্রচারে দেখা যায়নি বলেই জানিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দারা। এরা প্রত্যেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরনো দিনের সঙ্গী।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ভাইপো হলেও পুরনো দিনের নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে!