কাটমানি নিয়ে কঠোর তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দলের নেতাদের নেত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে এবার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ শুনবেন তিনি নিজে তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন৷ এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ করে তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট এক নেতার বিরুদ্ধে ৪০ লক্ষ টাকার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল৷
শহুরে রাজনীতিতে তৃণমূলের সেই পরিচিত মুখ হলে ডাঃ শান্তনু সেন৷ তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেন আবার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতিও। সেই শান্তনুর বিরুদ্ধে ৪০ লক্ষ টাকা কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ করলেন সুমন্ত চৌধুরী ওরফে নান্তি নামে এক প্রোমাটার।
দমদমের সিঁথি এলাকায় প্রোমোটারি করেন সুমন্তবাবু। শুক্রবার শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘‘২০১২ সাল থেকে তোলার টাকা দিয়ে আসছি আমি। এর আগে, কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন শান্তনু সেন। সিঁথিতে তিনি এই অলিখিত সিন্ডিকেট প্রথা চালু করেন। ২৫ হাজার টাকা তোলা নিয়ে হাতেখড়ি করেন। কেন টাকা দেব, জানতে চাইলে বলেন, গাড়ি ভাড়া এবং মাইক লাগানোর খরচ রয়েছে। তাই টাকা দিতে হয় নান্তিবাবু।’’ ওই প্রোমোটারের আরও অভিযোগ, কাজ হোক বা না হোক শান্তনু সেনকে কাঠা প্রতি দু’লক্ষ টাকা দিতে হত৷
ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘‘১৯৭৫ সাল থেকে ইট, বালি, সিমেন্টের ব্যবসা আমার। কিন্তু ২০১২-র পর থেকে কিছু বিক্রি করতে পারি না। নিজের কাজেও অন্যের থেকে চড়া দামে সব কিছু কিনতে হয়। এ ভাবেই আপস করে চলছিলাম এত দিন পর্যন্ত। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাহস দেওয়ায় তাই মুখ খুলেছি৷’’
শুধু শান্তনু সেন নন, দু’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহের বিরুদ্ধেও ‘তোলা’ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন সুমন্ত চৌধুরী৷ উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে কলকাতায় রাজ্যের সব পুরসভার কাউন্সলিরদের ডেকে বৈঠক করেন মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, কেউ কেউ সমব্যথীর ২০০০ টাকা থেকেও ২০০ টাকা কমিশন নেয়। কন্যাশ্রী থেকে স্বাস্থ্যসাথী সব প্রকল্প থেকেই দলের জনপ্রতিনিধিরা কাটমানি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন তৃণমূলনেত্রী।
কেউ কাটমানি নিয়ে থাকলে তা ফিরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকেই গ্রাম-মফস্বলে জনরোষ শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সে সবটাই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা পুরসভা স্তরের নেতাদের। এ বার খোদ কলকাতা শহরের বুকে এমন ঘটনা ঘটল৷ এখন দেখার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি পদক্ষেপ নেন শান্তনুর বিরুদ্ধে৷