ভাইপো ফার্স্ট তবু খুশি নন পিসি!
কর্তা সেকেন্ড হয়েছেন তবু মনমরা তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী!
কেন এমন হল?
পরীক্ষাই বা কিসের?
না না মাধ্যমিক বা আইসিএসই নয়। এ পরীক্ষা বড়দের। শুধু বড়দের বললে ভুল হবে। সমাজে যাঁরা বড়দেরও বড়, পথ চলতে যাঁদের ঢাউস ছবি দেখতে ইচ্ছে না করলেও দেখতে হয়, যাঁরা যে কোনও সময় যে কোনও বিষয়ে প্যান্ডেল বেঁধে, সুউচ্চ মঞ্চ থেকে, মাইক-চোঙা লাগিয়ে আবালবৃদ্ধবণিতাকে জ্ঞান প্রদান করেন, ফেল করেছেন তাঁরা।
এবার ঠিকই ধরেছেন। সাধারণের আয়করের টাকা খরচ করে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যে নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে দিল্লি পাঠান, ফেল করেছেন সেই লোকসভার সদস্য সদস্যারা। আর এই অকৃতকার্যের তালিকায় যাঁদের নাম সবার ওপরে তাঁরা এই রাজ্য থেকেই জিতে যাওয়া সাংসদ। আজ্ঞে হ্যাঁ, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলেরই এমপি তাঁরা।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টির মধ্যে ৩২টি আসন জিতে লোকসভা আলো করে বসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এই সাংসদ সংখ্যার শক্তিতেই বর্তমানে দলের নেত্রী আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির দিকে দৃকপাত করেছেন।
কিন্তু হলে কি হবে সংসদে তৃণমূলের সাংসদরাই বেশীরভাগ বিষয়ে ডাঁহা ফেল করে শুধুমাত্র সংখ্যামাত্র হয়ে রয়ে গেছেন।
এখানে বোঝা দরকার, যখন একদল রাজনীতিবিদ লোকসভা নির্বাচনে সাংসদ পদে জেতেন, তখন নিয়মিত অধিবেশনে যোগদান, প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ, বিল পেশ করা এবং জনসাধারনের গুরুত্বের বিষয়গুলি তুলে ধরা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর এই বিষয়গুলিতেই বেশীরভাগ তৃণমূল সাংসদরা পিছিয়ে রয়েছেন। পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চ বলছে তৃণমূলের প্রায় অর্ধেক সাংসদই এই বিষয়গুলিতে অ্যাভারেজ মার্কসও পান না।
সবথেকে মজার ব্যাপার হল এই খারাপ ফল করা সাংসদদের তালিকায় তৃণমূল নেত্রীর ভাইপো ও ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শীর্ষে, তালিকায় রয়েছেন উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় এবং বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেনও।
অভিষেকের সংসদে উপস্থিতি মাত্র ২৪% (প্রয়োজন ৮০%), তিনটি বিতর্কে যোগ দিয়েছেন, মাত্র ৪৮টি প্রশ্ন করেছেন, এবং একটিও বিল পেশ করেননি।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফল এর থেকে একটু ভাল। তাঁর উপস্থিতি ৬০%, ৫৫টি বিতর্কে যোগ দিয়েছেন। তবে একটিও প্রশ্ন করেননি বা সংসদে একটিও প্রস্তাব পেশ করেননি।
শিশির অধিকারীর উপস্থিতি ৪৬%, তিনি ২৪৬টি প্রশ্ন করেছেন তবে কোনও বিল পেশ করেননি এবং কোনও বিতর্কেও অংশ নেননি।
শুধু এঁরাই নন, তৃণমূলের নিষ্কর্মা সাংসদের তালিকায় রয়েছেন ঘাটালের দীপক অধিকারী মানে নায়ক দেব, জলপাইগুড়ির বিজয় চন্দ্র বর্মন, মথুরাপুরের চৌধুরী মোহন জাটুয়া, বসিরহাটের ইদ্রিশ আলি, বারাসতের কাকলি ঘোষ দস্তিদার, পুরুলিয়ার মৃগাঙ্ক মাহাতো, হাওড়ার প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণুপুরের সৌমিত্র খাঁ, কলকাতা দক্ষিণের সুব্রত বক্সী, যাদবপুরের সুগত বসু, কৃষ্ণনগরের তাপস পাল ও ঝাড়গ্রামের উমা সোরেন।
সবথেকে খারাপ ফল দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ সুব্রত বক্সীর। তাঁর উপস্থিতি মাত্র ২৪% এবং বাকি সব বিভাগে শূন্য রয়েছে।
এবার আসা যাক তৃণমূলের পাস করা সাংসদদের তালিকায় । সেরা দুই সাংসদ দমদমের সৌগত রায় এবং হুগলির রত্না দে। এঁরা দুজনেই সব বিষয়েই স্টার পেয়েছেন।
উপস্থিতির ক্ষেত্রে মাত্র ৮জন সাংসদের নাম উল্লেখনীয়। তাঁরা হলেন, সৌগত রায় (৯০%), তাপস মন্ডল (৮৯%), অনুপম হাজরা ( ৮৮%), মমতাজ সংঘমিত্রা(৮৫%), সুনীল কুমার মন্ডল (৮৩%), অপরূপা পোদ্দার (৮২%), দীনেশ ত্রিবেদী (৮২%) এবং রত্না দে (৮০%)।
এর মধ্যে সৌমিত্র খাঁ এখন বিজেপিতে। অনুপম হাজরা দল থেকে বহিষ্কৃত। শোনা যাচ্ছে ইদ্রিস আলি এবার টিকিট পাবেন না। বাকিদের মধ্যে ফেলের তালিকায় সবচেয়ে উজ্জ্বল যাঁর উপস্থিতি তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করা হয় তিনি তৃণমূলের যেমন বর্তমান তেমনই ভবিষ্যৎ। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করে সংসদেই এমন পারমেন্স করলে ভোটাররা কী বলবে! যদি সত্যিই একদিন ভোটাররা কথা বলে ওঠে!
2019-03-07