আচ্ছা, তো এই কবিতা একটি আদ্যন্ত বামপন্থাবিরোধী মুক্তচিন্তাবিরোধী ফ্যাসিস্ত কবিতা। কেন? আসুন একে একে আলোচনা করি।
শুরুতেই বলা হচ্ছে, ফুলেরা যেন না ফোটে। অথচ বাঙালী বামেদের তরফে আমরা চিরকাল উল্টোটাই শুনে এসেছি। যথা, ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বামফ্রন্ট। কিংবা ধরা যাক, শত ফুল বিকশিত হোক। ফলে দেখা যাচ্ছে শুরুর লাইনেই ঘাপলা। ফুলেদের বাঁচার অধিকার গলা টিপে মেরে আজ কারা একতরফা বিয়াল্লিশে-বিয়াল্লিশ কাঁটার রাজত্ব কায়েম করতে চায়? বহুত্ববাদবিরোধী এই কবিতাকে মুর্দাবাদ।
তারপর কী? তারপর দেখা যাচ্ছে, কবি বলছেন, ফুলে মধু নেই, বিষ। এখানে বিষকে ডাউন দিয়ে মধুকে তুলে ধরা হল। মধু কারা খায়? খেতে পারে? মধুর এখন কত দাম যাচ্ছে এই বুর্জোয়া কবি জানেন? মধু খায় বড়লোকে। আর বিষ কারা খায়? বিষ খায় কৃষকভাইরা। বিষ খাওয়ার আগে যাদের পায়ের ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়া হয়। এখন বিষের বিরুদ্ধে মধুকে পিনিক দেওয়া ঘৃণ্য বুর্জোয়া কালচার কিনা আপনারাই ভেবে দেখুন। বুর্জোয়া এই কবিতাকে মুর্দাবাদ।
মাঝেরটুকু তো আরও ভয়ানক। ফুল কেন সর্বনাশী? না তারা মাংসাশী। একবার ভেবে দেখুন, মাংসাশীকে খারাপ বলে দাগিয়ে দিয়ে এ দেশের মাটিতে ধোকলা-ভুজিয়া কালচার ঢোকাতে চাইছে কারা? মানুষের সাথে এই চুপকি যারা করতে চাইছে, ছবির আপার রাইট কর্নারে তাদের নাম লেখা আছে। চিনে নিন। বাংলার মাটিতে আমরা মোইলি মচ্ছা নালিত গচ্ছা ইত্যাদি বহুদিন খেয়ে আসছি, তারপর ছাগল মুরগি শুয়োর গোরু এমনকি সুবিধে পেলে মহামাংস অব্দি বাদ দিইনি। এখানে কোনোরকম ভেজবাজারি চলবে না। বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।
গোলাপ ব্যাপারটাকে আপানো হয়েছে পশ্চিমি পুঁজিবাদের তরফে, সাধারণ মানুষকে মুরগি করে। উপরন্তু গোলাপ বেশ দামী ফুলও বটে। ভ্যালেন্টাইনবাজারির সময় পঁচিশ টাকা পিস নেয় হাওড়া ব্রিজের তলার ফুলের বাজারে। একটা গোলাপের দামে সর্বহারার একবেলার খাবার হয়ে যায়। অপরকে তুচ্ছ করার যে অভ্যাস সমাজের উচ্চশ্রেণির রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই অভ্যাসেই বুর্জোয়া গোলাপকে বিজয়ের নিশান বানিয়ে কবি বুঝিয়ে দিলেন তিনি আসলে পুঁজিবাদের বিজয় চান। পুঁজিবাদী এই কবিতাকে মুর্দাবাদ।
পঞ্চানন নস্কর