কলকাতায় নতুন করে ‘সদস্যতা অভিযান’ শুরু করবে রাজ্য বিজেপি। কারণ, দলীয় সদস্য সংগ্রহকারী অভিযানের ব্যাপক সাফল্যের পরেও কলকাতায় এই অভিযান তেমন ভাবে সফল নয়, তা নেতা – কর্মীদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। গেরুয়া শিবিরের অন্দরের তথ্য অনুযায়ী উঠে এসেছে, উত্তর কলকাতায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি এবং দক্ষিণ কলকাতায় ৩০ হাজার মতো নতুন সদস্য তৈরি করা গিয়েছে।
এই পরিসংখ্যান একদমই খুশি করতে পারেনি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং কার্যকরী সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডাকে। কলকাতায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা নিয়ে অসন্তুষ্ট এই দুই নেতাই রাজ্য বিজেপিকে শহরে ফের সদস্য সংগ্রহকারী অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমনিতেই এবছর ডিসেম্বর পর্যন্ত সদস্যতা অভিযান চলবে। কিন্তু কলকাতার জন্য জানুয়ারি থেকেই নতুন সদস্যতা অভিযানের ডাক দেবে বিজেপি – আপাতত সেটাই ঠিক হয়েছে।
তবে কলকাতা বাদ দিলে সারা রাজ্যে বিজেপির সদস্য সংখ্যা যা বেড়েছে তাকে উল্লসিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি সদস্যসংখ্যার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল রাজ্য বিজেপি৷ কিন্তু যা পরিস্থিতি, অক্টোবরের শুরুতেই বিজেপির সদস্যসংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষেরও বেশি। সুতরাং বলা যায় প্রায় দু’মাস বাকি থাকতেই সদস্যসংখ্যা লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছে৷ রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য রাজ্যের জন্য নতুন কোনও লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেনি৷ জনসঙ্ঘের প্রণেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন ৬ জুলাই সদস্যতা অভিযান শুরু করেছিল বিজেপি৷
মনে রাখা প্রয়োজন এটি শুধু রাজ্যের কর্মসূচী নয়, সারা দেশেই এই সদস্যতা অভিযান শুরু করা হয়েছিল৷ দায়িত্বে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান৷ সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই সদস্যতা অভিযানে সেরার শিরপা পেয়েছে৷ সদস্যতা অভিযান শেষ হওয়া পর্যন্ত রাজ্যে বিজেপির ৭৭ লক্ষ সদস্য ছিল৷ রাজ্যবাসীর উৎসাহ দেখে সদস্যতা অভিযান ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে লক্ষমাত্রা ১ কোটি করেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷
কলকাতায় বিজেপির ৪টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। কলকাতা উত্তর এবং দক্ষিণ, উত্তর শহরতলি এবং দক্ষিণ শহরতলি। উত্তর কলকাতায় বিজেপির পুরানো সংগঠন রয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, উত্তর শহরতলি এলাকায় শমীক ভট্টাচার্য দমদম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন। সেখানে বুথস্তরে সদস্য সংগ্রহের কাজ হয়েছে। সমস্যা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতাকে নিয়ে। সদস্যতা অভিযান চলাকালীন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ দক্ষিণ কলকাতার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সেখানে তিনি ওই এলাকার নেতৃত্বকে একহাত নেন। দিলীপের ধমক খেয়ে অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সদস্য সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। দক্ষিণ শহরতলী এলাকায় বিজেপি নেতা রাকেশ সিং বন্দর অঞ্চলের ৬টি ওয়ার্ডে কিছুটা সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, তিনটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সদস্য সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু, যাদবপুর এবং টালিগঞ্জে ভালো সদস্য হয়েছে। বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিমে অভিযান তুলনামূলক ভাবে তেমন সফল নয়।
কিন্তু কলকাতায় আবার নতুন করে সদস্যতা অভিযান চালু করার কথা দল কেন ভাবছে? রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, দলের অভ্যন্তরীন আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় দল কলকাতায়, যা পশ্চিমবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র, সেখানে আরও সদস্য সংখ্যা আশা করেছিল।