রাজ্য জুড়ে করোনা প্রতিষেধকের সঙ্কট। তারই মধ্যে ১০ জনের জন্য বরাদ্দ প্রতিষেধক ১২ জনকে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। জাগল আশঙ্কা, তবে কি শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় কম প্রতিষেধক ঢুকছে! সে ক্ষেত্রে প্রতিষেধক আদৌ কার্যকর হবে তো!
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-১ ব্লকের এই ঘটনায় বিতর্ক বেধেছে। নিয়মানুযায়ী, করোনা প্রতিষেধকের একটি ভায়াল থেকে ১০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্তত ১২ জনকে টিকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগের
তির ব্লকের তরফে টিকাকরণের দায়িত্বে থাকা এক ‘সিনিয়র’ নার্সের দিকে। ক্ষুব্ধ নার্সরা তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনে লিখিত নালিশও জানিয়েছেন। তৃণমূল প্রভাবিত ওই কর্মী সংগঠনের জেলা নেতা সুব্রত সরকার মানছেন, ‘‘দাঁতনের কয়েকজন নার্স বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আমরাও বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরকে জানাচ্ছি।’’
নিয়মমতো প্রতিটি ভায়ালে ৫ মিলিলিটার প্রতিষেধক থাকে। প্রতিটি ডোজ়ের জন্য বরাদ্দ ০.৫ মিলিলিটার। সেই মতো ১০
জনকেই প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব। সরকারি নির্দেশিকাও তাই। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য
আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা মানছেন, ‘‘একটি ভায়াল থেকে ১০ জনকে টিকা দেওয়ারই কথা। নির্দেশিকায় তেমনই বলা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
নার্সরা লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ব্লকের টিকাকরণে নজরদারি চালানোর কথা ওই সিনিয়র নার্সের। কিন্তু তিনি নিজেই ভ্যাক্সিনেটর হিসেবে কাজ করে চলেছেন। তাঁর কঠোর নির্দেশ, একটি ভায়াল থেকে যে কোনও ভাবে ১২ জনকে টিকা দিতে হবে। এক নার্সের কথায়, ‘‘ওঁকে বলেছিলাম, একটি ভায়াল থেকে ১২ জনের ডোজ় টানা সম্ভব নয়। উনি তখন বলেন, ‘আমি তো পারি। তাহলে বাকিরা পারবে না কেন!’ ওঁর নির্দেশ, ৩০টি ভায়ালে ৩০০ জনকে নয়, বরং ২৫টি ভায়ালেই ৩০০ জনকে টিকা দিতে হবে।’’
দাঁতন ১-এর ভারপ্রাপ্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিষেক কুণ্ডুর যুক্তি, ‘‘বাড়তি ডোজ় নষ্ট করা যাবে না বলে নির্দেশিকা রয়েছে। সেই বাড়তি ডোজ়ই ব্যবহৃত হচ্ছে।’’ জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একটা বড় অংশ অবশ্য স্পষ্ট জানাচ্ছেন, কিছু ক্ষেত্রে ভায়ালে এটি ডোজ় বাড়তি থাকতে পারে। কিন্তু একের বেশি নয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের প্রফেসর তথা আইএমএ-র মেদিনীপুর শাখার সম্পাদক কৃপাসিন্ধু গাঁতাইতও বলেন, ‘‘একটি ভায়াল থেকে ১০ জনকেই টিকা দেওয়ার কথা।’’
অঙ্ক বলছে, এ ক্ষেত্রে সকলে সঠিক মাত্রায় প্রতিষেধক পাচ্ছেন না। ফলে, কার্যকারিতাও কমছে বলে আশঙ্কা। কৃপাসিন্ধুর কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ক্ষতি হতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যথাযথ কার্যকারিতার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণেই।