প্রায় ১.৬ কোটির অধিক মহিলা পশ্চিমবঙ্গের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিবাহ সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে এসে বাস করছেন। এর তুলনায় পুরুষরা, যারা পশ্চিমবঙ্গে অভিবাসিত হয়েছেন তার হার নগণ্য । মাত্র ৩.৪ লাখ পুরুষ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন । ১.৬৫ কোটির অনুপাতে ৩.৪ লাখ মাত্র দুই শতাংশ ।
২০১১ সালের অভিবাসন আদমশুমারি থেকে দেখা যাচ্ছে যে ৪৯.৫ শতাংশ মানুষ পশ্চিমবঙ্গে পা রেখেছেন বিবাহ সূত্রে, যেখানে মাত্র ৪.৯ শতাংশ কাজের খোঁজে এসেছেন, আর বাকিরা এসেছেন ব্যবসা, শিক্ষা বা পরিবারের সঙ্গে অভিবাসিত হয়ে।
বিবাহ সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে অভিবাসনের এই ধারা গ্রামাঞ্চলেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। প্রচুর সংখ্যক মহিলা দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলায়, মূলত মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে বসবাস করছেন। এর তুলনায় দেখা যাচ্ছে যে ১.৫ লাখ মানুষ কলকাতাতে অভিবাসিত হয়েছেন, যার মধ্যে মাত্র ৪০০০ জন পুরুষ । পশ্চিমবঙ্গের বাইরের যে যে রাজ্য থেকে অভিবাসনের সংখ্যা সব থেকে বেশি সেই রাজ্যগুলি হল বিহার ও ঝাড়খণ্ড। এছাড়া এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকেও মহিলারা এসেছেন। ২০১১ সালের আদমসুমারিতে কোনো দেশের উল্লেখ না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এই দেশটি হল বাংলাদেশ।
অভিবাসনের এই সমস্যাটি সমগ্র দেশের। সারা দেশের ৪৫.৫ কোটি অভিবাসিত মানুষদের মধ্যে ২১.১ কোটি মহিলা বিবাহ সূত্রে এসেছেন। মাত্র ৪.১ কোটি মানুষ কাজের সুত্রে এসেছেন।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, বিবাহ সূত্রে অভিবাসনের এই ধারা ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য। লেখক এবং ইতিহাসবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী কয়েক শতক পিছিয়ে পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন সেই সময় থেকেই বিবাহ সূত্রে অভিবাসনের ধারা অব্যাহত। ষষ্ঠ শতক থেকে এই ধারার সূত্রপাত এবং নবম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত এই ধরনের বিবাহের নিদর্শন পাওয়া যায়।
আদমশুমারির তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ১.৬৫ কোটির মধ্যে থেকে ১.৩৯ কোটি বা ৮৪.৩ শতাংশ মহিলা বিবাহ সূত্রে গ্রামাঞ্চলে এসে থাকছেন। মাত্র ৩.৪ লাখ মানুষ শহর বা মফঃস্বলে থাকছেন। রাজ্যের ৫ টি জেলায় ১০ লাখ বিবাহিত মহিলা অভিবাসিত হয়ে এসেছেন, যেখানে কলকাতায় এই সংখ্যাটা মাত্র ১.৫ লাখ। অভিরূপ সরকারের মতে এই তারতম্যের কারন হল কলকাতায় জীবন ধারনের খরচ বেশি হওয়া ।
সমাজতত্ত্ববিদ সুদেষ্ণা বসু মুখার্জি, পশ্চিমবঙ্গের এই বিবাহ সূত্রে অভিবাসনের প্রবণতাকে কেন্দ্র করে তাঁর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য হল শুধু মাত্র সমাজ-সংস্কৃতিগত মিলের বাইরেও এই ধরনের বিবাহের আরও অনেক কারণ থাকতে পারে যা খতিয়ে দেখতে হবে, অর্থাৎ শুধুমাত্র পারিবারিক সূত্রে যোগাযোগ থেকে বিবাহ সংঘটন ব্যতিরেকেও এর পেছনে কিছু অন্য কারন অবশ্যই আছে। সমাজবিদ মধুলিকা মিত্রও গ্রামীণ ক্ষেত্রে এই ধরনের বিবাহের সঠিক কারন অনুসন্ধানের পক্ষে সওয়াল করেছেন।