রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত মহিলারা সুপ্রিম কোর্টে, জানা গেল নাতির সামনে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করার কাহিনী

পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসায় নিহত দুই বিজেপি কর্মীর আত্মীয়দের আর্জি শুনতে রাজি হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে সাহস পেয়ে বেশ কয়েকজন গণধর্ষিতা শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাঁদের আর্জি, গুজরাতে দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যেমন নিজে উদ্যোগী হয়ে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছিল, পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও তাই করা হোক।

অভিযোগকারিণীদের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটে বিপুল ব্যবধানে জেতার পরে ১৫ দিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা সর্বত্র দাপিয়ে বেড়িয়েছে। অবাধে খুন, লুটপাট ও ধর্ষণ করেছে তারা। ৬০ বছর বয়সী এক মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে। ৪ মে রাতে তাঁর বাড়িতে টিএমসি সমর্থকেরা ঢুকে পড়ে। ছয় বছর বয়সী নাতির সামনে ধর্ষণ করে তাঁকে। বাড়ির জিনিসপত্র লুঠ করে।

SuranaFashion
মহিলা সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি খেজুরি বিধানসভা কেন্দ্রে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী জিতেছেন। কিন্তু তার পরেও ৩ মে কয়েকশ টিএমসি সমর্থক তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে। বোমা মেরে বাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে মহিলার পুত্রবধূ পরদিনই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ৪ মে রাতে ১০০-২০০ টিএমসি সমর্থক তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তাঁকে খাটের সঙ্গে বেঁধে ধর্ষণ করে।

পরদিন সকালে প্রতিবেশীরা মহিলাকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে। তাঁকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মহিলার জামাই থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। মহিলার বক্তব্য, ভোটে জেতার পরে তৃণমূল ধর্ষণকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। বিরোধী পরিবারগুলিকে চুপ করানোর জন্য তাদের পরিবারের মহিলাদের ওপরে অত্যাচার করা হচ্ছে।

ধর্ষিতা জানিয়েছেন, যে পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ করেছিল, তাদের সকলের নামই তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন। তারা স্থানীয় তৃণমূল কর্মী। ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা যায়, ধর্ষণের অভিযোগ সত্যি। কিন্তু তার পরেও পুলিশ মাত্র একজনের নামে এফআইআর করেছে। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার জন্যই বৃদ্ধা সিট গঠনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছেন।

তফসিলী জাতির এক কিশোরীও সুপ্রিম কোর্টে গণধর্ষণের অভিযোগ জানিয়েছে। তার বয়স ১৭ বছর। অভিযোগ, ৯ মে তাকে গণধর্ষণ করে জঙ্গলে ফেলে আসা হয়। পরদিন বাহাদুর শেখ নামে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে বলে, পুলিশে অভিযোগ করলে ফল খারাপ হবে। তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে খুন করা হবে।

মেয়েটি জানিয়েছে, তাকে এখন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার হোমে রাখা হয়েছে। বাবা-মাকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা করছে না। উল্টে তাদের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে বলছে, চুপচাপ না থাকলে মেয়েটির বোনও গণধর্ষণের শিকার হতে পারে।

অপর এক মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী বিজেপির হয়ে প্রচার করেছিলেন বলে খুন হয়েছেন। ১৪ মে দিনের বেলায় টিএমসি সমর্থকেরা তাঁর স্বামী ও ভাসুরকে কুড়ুল নিয়ে আক্রমণ করে। প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে তাঁদের কোপানো হয়। অভিযোগকারিণীকেও ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছিল। পুরো আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।

অভিযোগকারিণী তাঁর স্বামীর দেহ সৎকারের পরে থানায় অভিযোগ জানাতে যান। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার অভিযোগ নেননি। উল্টে তাঁকে থানা থেকে বার করে দেন। মহিলার বক্তব্য, পুলিশ অপরাধীদের ধরার চেয়ে আক্রান্তদের ভয় দেখাতেই বেশি তৎপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.