প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে রিভিউ মিটিংয়ের পর শনিবারই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে, মকর সংক্রান্তি কাটলেই ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশে কোভিডের টিকাকরণ শুরু হয়ে যাবে। দেশের মোট ৩ কোটি ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রথমে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবে কেন্দ্রের সরকার। তার পর আরও ২৭ কোটি নাগরিকদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
তার পরপরই বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চিঠি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জেলার পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের সরকার বিনামূল্য রাজ্যের সমস্ত মানুষের কাছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।”
ঘটনা হল:
• সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন’, ভারতে যা উৎপাদিত হয়েছে তার পুরো স্টক এখন কেন্দ্রের সরকারের কাছেই রয়েছে। কোনও রাজ্য সরকারের কাছে নেই।
• কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের কথায়, ভ্যাকসিন দেওয়া তথা টিকাকরণ নিয়ে বিভ্রান্তি ও অব্যবস্থার আশঙ্কায় স্থির হয়েছে, প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যার নিরিখে কেন্দ্রই বিনামূল্যে রাজ্যগুলিকে সেই সংখ্যক ভ্যাকসিন পাঠাবে।
• অর্থাৎ রাজ্যের কাজ শুধু সেই টিকা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং টিকাকরণে সাহায্য করা। টিকা বাবদ কিন্তু রাজ্যের কোনও খরচ নেই। প্রথম দফায় ৩ কোটি স্বাস্থ্য কর্মীদের টিকা বাবদ খরচ কেন্দ্রই বহণ করছে। তবে হ্যাঁ, পরিবহণ বাবদ সামান্য খরচ হতে পারে।
• দ্বিতীয় দফায় যে ২৭ কোটি নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে, তার পুরো খরচই দেবে কেন্দ্র। ৫০ বছর বয়সের উর্ধ্বে প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা দেওয়া হবে। যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের আগে টিকা দেওয়া হবে।
• পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, তৃণমূল সরকার বিনামূল্যে মানুষের কাছে ভ্যাকসিন ‘পৌঁছে’ দেবে। ভ্যাকসিন বাবদ কেন্দ্র না রাজ্য কে খরচ করছে তা বলা নেই।
• বস্তুত টিকাকরণের প্রক্রিয়ায় বরাবরই কেন্দ্র মূল খরচ বহণ করে। যেমন, পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে তা কেনা, সরবরাহ, বণ্টন এবং তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিজ্ঞাপন ও প্রচার বাবদ খরচ করে কেন্দ্রই।
এ ব্যাপারেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের সমালোচনা করেছেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য। তিনি টুইট করে বলেছেন, “পিসির কোভিড ব্যবস্থাপনা ছিল ভয়ঙ্কর। চিকিৎসক, পুলিশ সবাই এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করেছিলেন। আর এখন, কেন্দ্রীয় সরকার যখন দেশের ৩ কোটি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারকে বিনামূল্যে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলছে, তখন পিসি ক্রেডিট নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।”
বাংলায় কোভিডের ব্যবস্থাপনা নিয়ে গোড়ায় ভূরিভূরি অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। কোভিডের কেস গোপন করা, কোমর্বিডিটির কারণ দেখিয়ে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা কম করে দেখানো, লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়িত না করা, ভরা সংক্রমণের মধ্যে ফুলের বাজার, মিষ্টির দোকান খুলতে অনুমতি দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে বারবার অসন্তোষ জানিয়ে নবান্নকে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা।
অনেকের মতে, এ বার ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়েও চাপানউতোর শুরু হল বলে। রবিবার সকালেই তার পরিষ্কার ইঙ্গিত পাওয়া গেল।