কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আন্তঃমন্ত্রক টিম মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে (Rajiv Sinha) চিঠি পাঠানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নড়েচড়ে বসল নবান্ন। বাংলায় কোভিড হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোগত খামতি এবং রোগীর নমুনা পরীক্ষায় বিলম্ব দূর করতে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করলেন মুখ্য সচিব।
এদিনই সমস্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ও সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করে ১১ দফা নির্দেশ পাঠিয়ে দেন রাজীব সিনহা (Rajiv Sinha)। তাতে স্পষ্টতই বলা হয়, কোনও রোগী মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে মরদেহ ওয়ার্ড থেকে সরাতে হবে। নবান্নের দ্বিতীয় বড় নির্দেশ, রোগীর দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করার ১২ ঘন্টার মধ্যে টেস্ট রেজাল্ট জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, কদিন আগে বাঙ্গুর হাসপাতালের (Bangur Hospital) আইসোলেশন ওয়ার্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। যদিও সেই ভিডিও সত্যতা দ্য ওয়াল যাচাই করেনি। তবে ওই ভিডিও দেখা গিয়েছিল, মৃত্যুর পরেও আইসোলেশন ওয়ার্ডের মধ্যে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। রোগীর বেডের কয়েক হাতের মধ্যেই পড়ে আছে মৃতদেহ। এই ঘটনা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাঙ্গুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন আন্তঃমন্ত্রক কমিটির সদস্যরা।
দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় টিম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, রোগীর দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহের পর টেস্ট রেজাল্ট আসতে খোদ মহানগরীর হাসপাতালে কী রকম বিলম্ব হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহের পর চার-পাঁচ দিন কেটে গেলেও টেস্ট রেজাল্ট আসছে না। এ ব্যাপারেও স্বাস্থ্য দফতর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল কেন্দ্রীয় টিম। আজ শুক্রবার সে ব্যাপারে মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে ফের এই সব বিষয়ে জবাব চেয়েছেন কলকাতায় আসা আন্তঃমন্ত্রক টিমের প্রধান তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র (Apurba Chandra)।
কেন্দ্রীয় টিমের সেই চিঠি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। অনেকের মতে, তাতে বেআব্রু হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অবস্থা। সেই নমুনা পরীক্ষা নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগও নবান্নকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তার পরই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠির সঙ্গে এই পদক্ষেপের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা অবশ্য স্বাস্থ্য দফতর বা নবান্ন জানায়নি।
স্যাম্পেল টেস্টের সময় কমানো ও ওয়ার্ড থেকে মৃতদেহ সরানোর ব্যাপারে নির্দেশিকার পাশাপাশি ওই ১১ দফা গাইডলাইনে আরও বলা হয়েছে—
- মেডিক্যাল কলেজ বা সরকারি হাসপাতালগুলি কোনও রোগীকে ফেরাতে পারবে না।
- যদি কোনও রোগীকে অন্য জায়গায় রেফার করতে হয় তাহলে তাঁকে যথাযথ অ্যাম্বুলেন্স সাপোর্ট দিতে হবে।
- ওপিডি বা জরুরি বিভাগে সমস্ত চিকিৎসককে পিপিই পরতে হবে।
- হাসপাতালগুলিকে নিয়মিত স্যানিটাইজ করতে হবে।
- ডাক্তাররা যেখানে বসেন বা পোশাক বদলান সেই জায়গায় স্যানিটাইজেশন বাধ্যতামূলক।
- কোভিড সংক্রান্ত কাজ পরিচালনার জন্য মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যালদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।
- বিশেষ ভাবে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালকে বলা হচ্ছে সমস্ত পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত রাখতে।
- স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের নিয়মিত মেডিক্যাল কলেজগুলি পরিদর্শন করতে হবে।
- সরকারি হাসপাতালে কোনও রোগীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হলে তা বরদাস্ত করবে না সরকার।
এর আগে এদিন কেন্দ্রীয় টিমের তরফে মুখ্য সচিবের কাছে এও জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর কারণ কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হচ্ছে তা স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন বলেও জানিয়েছিলেন অপূর্ব চন্দ্র। দেখা যায়, ঘটনাচক্রে এদিন বিকেলে মুখ্য সচিব এই প্রথম জানান, বাংলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ জন মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৮জন্য মৃত্যুর কারণ কোভিড, বাকি ৩৯ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ছিল ইন্সিডেন্টাল। এবং তখনও মুখ্য সচিব জানান, এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠির কোনও সম্পর্ক নেই।