অবাক কান্ড! কিষাণ সম্মান নিধির টাকা পেলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক-পেনশনভোগীরা।

অবাক কাণ্ড! কৃষক সন্মান নিধি প্রকল্পের টাকা ঢুকল শিক্ষক ও সরকারি কর্মীদের অ্যাকাউন্টে। তৈরি হল বিতর্ক। টাকা ফেরৎ চেয়ে পড়ল আবার নোটিসও। তারপরই টাকা ফেরত দিতে লাইন সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের। কৃষি দফতরের সাফ কথা, কোথাও কোনও ভুলই হয়নি। আসলে ওই শিক্ষকরাই অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। তাই তাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। আর এখানেই শুরু হয়েছে রাজনীতি। বিজেপির বক্তব্য, তৃণমূল নিজেদের লোককে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দিতে চাইছে। আর তাই বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র চাষিরা। কেন্দ্রীয় ছানবিন শুরু করতেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে বিড়াল!

নভেম্বরেই কাটোয়ার একাধিক সরকারি স্কুলের শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পের ৬ হাজার টাকা করে ঢোকে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে, যখন অ্যাকাউন্টে ঢোকা কৃষক সন্মান নিধির টাকা ফেরত চেয়ে নোটিস পায় কৃষি দফতর। বিভিন্ন ব্লকের কৃষি দফতরে চিঠি পাঠানো হয় টাকা ফেরৎ দেবার কথা জানিয়ে। ব্লক কৃষি দফতর থেকে তালিকা অনুযায়ী ব্লকে ব্লকে ভুয়ো কৃষকদের টাকা ফেরৎ চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়। সেই নোটিস পেয়েই তড়িঘড়ি সেই ৬ হাজার টাকা ফেরৎ দিতে কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের কৃষি দফতরে ছুটলেন শিক্ষক, সরকারি কর্মীরা।

কীভাবে অভাবী কৃষকদের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের টাকা ঢুকল সরকারি শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। যদিও টাকা পাওয়া শিক্ষকদের বক্তব্য, ভুল বশত তাঁদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা এসেছে। শিক্ষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী ও পেনশন প্রাপকও রয়েছেন এই তালিকায়।

যদিও কৃষি দফতরের আবার অন্য কথা। তারা সাফ জানিয়েছে, তাঁরা অনলাইনে স্বঘোষনা পত্র দিয়ে এই প্রকল্পের টাকা পেতে আবেদন করেছিলেন এই ‘ভুয়ো’ কৃষকরাই। তাই তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। এক্ষেত্রে কৃষি দফতরের কোন ভুল নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা শুরু করলেই, বিষয়টি ধরা পড়ে যায়।

এই ঘটনায় বিজেপির কটাক্ষ, তৃণমূল প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের লোকেদের টাকা পাইয়ে দিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, “কৃষকদের স্বার্থে এই প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই টাকা গরিব চাষিদের পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, চাষিদের বদলে তৃণমূল নিজেদের লোককে এই টাকা পাইয়ে দিয়েছে। ক্যাডার, পার্টি সদস্য তাদেরকে টাকা পাইয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত করে বিষয়টা ধরে ফেলেছে। এখন অনেকেই টাকা ফেরত দিতে চাইছেন না। আমরা চাই সত্য বেরিয়ে আসুক। এর তদন্ত হোক।”

নিয়ম অনুযায়ী কোনও সরকারী কর্মী এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে টাকা প্রাপকের তালিকায় ধরা পড়ে পঞ্চায়েত কর্মী, সরকারি স্কুলের শিক্ষক, পেনশন প্রাপকরাও। ধরা পড়ে দুর্নীতি। টাকা চেয়ে রাজ্য সরকারের কৃষি দফতরে চিঠি পাঠায় কেন্দ্র।

টাকা পেয়েছেন এমন এক শিক্ষক বললেন, “আমি প্রথমে কৃষাণ মাণ্ডির সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওখান থেকে বলে টাকা ফেরত দিতে হবে। একটা অ্যাপ্লিকেশন দিই। আমাকে একটা ফর্ম দিই। তারপর ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে আসি। কাগজপত্র নিয়ে ফের দেখা করি। আমার কৃষক বন্ধু আছে। পিএম কৃষাণের জন্য স্বঘোষণাপত্র নিয়েছিলেন। সেটা আমি জমা দিইনি। তারপর এটা হয়ে যায়। কৃষক বন্ধু করা ছিল। এটা গাফিলতিতেই হয়েছে।”

“আমাদের পিএম কৃষাণ চাষিরা প্রথমে নিজেরাই অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। একটা সেলফ ডিক্লেরেশন দিয়েছিলেন। তাঁরাই বলেছিলেন, তাঁরা সরকারি চাকরি করেন না, একই পরিবারের নন। আমরা সেই ফর্মের ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। পরে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার পর খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, একই পরিবার ভুক্ত, কিংবা সরকারি চাকরি করেন। কৃষি দফতরের গাফিলতি এক্ষেত্রে নেই। ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। তাঁদেরকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।” যদিও তৃণমূলের তরফে এই ঘটনার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.