পুরুষ হোক কিংবা মেয়ে। উইম্বলডন (Wimbledon) মানেই সবুজ ঘাসের উপর সাদা পোশাক। গত ১৪৬ বছর ধরে দেখতে অভ্যস্ত টেনিসপ্রেমীরা। মহিলা টেনিস খেলোয়াড়দের (Women Tennis Player) একাধিক সমস্যা, আপত্তি সত্ত্বেও পোশাক বিধি বদলাতে নারাজ ছিল অল ইংল্যান্ড ক্লাব (All England Club) কর্তৃপক্ষ। তবে শেষ পর্যন্ত টেনিস তারকাদের, বিশেষ মহিলা খেলোয়াড়দের দাবি মানতে বাধ্য হল নাক উঁচু ব্রিটিশরা। মহিলা টেনিস খেলোয়াড়দের জন্য রঙিন অন্তর্বাস পরার অনুমতি দিল উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ। এবারের উইম্বলডন থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে।
উইম্বলডনের নিয়ম অনুসারে, একেবারে সাদা পোশাক পরে নামতে হবে খেলোয়াড়দের। অন্তর্বাসও সাদা রঙেরই হতে হবে। পোশাকে কেবলমাত্র ১ সেন্টিমিটার চওড়া বর্ডার থাকতে পারে। এই নিয়মের বিরোধিতা করায় শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল স্বয়ং রজার ফেডেরারকেও। কমলা রঙের বর্ডার থাকার জন্য কোর্টের মধ্যেই তাঁকে জুতো পালটাতে বাধ্য করা হয়। এমনকি অন্তর্বাস বদলাতেও বাধ্য হন মহিলা খেলোয়াড়রা। উপায়ান্তর না দেখে অন্তর্বাস ছাড়াও খেলতে নেমেছেন অনেকেই। ১৪৬ বছর পরে অবশেষে যাবতীয় গোঁড়ামি কাটিয়ে নিয়ম পরিবর্তন করল উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ।
অল ইংল্যান্ডে ক্লাবের তরফে জানানো হয়েছে, মহিলাদের ঋতুস্রাবের কথা মাথায় রেখেই নিয়ম বদলের সিদ্ধান্ত। কিংবদন্তি বিলি জিন কিং থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের মহিলা টেনিস তারকা-সকলেরই দাবি ছিল নিদেনপক্ষে রঙিন অন্তর্বাস পরার অনুমতি দেওয়া হোক। তারপরেই অল ইংল্যান্ড ক্লাবের চিফ এক্সিকিউটিভ স্যালি বোল্টন বলেছেন, “আশাকরি নিয়ম বদলানোর ফলে উপকৃত হবেন খেলোয়াড়রা। শুধু ম্যাচের দিকেই মন দিতে পারবেন তাঁরা।” তিনি আরও যোগ করেছেন, “খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমরা এই ইস্যু নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি। তাদের মতামত নেওয়ার পরে আমরা বিষয়টা নিয়ে অনেক ভেবেছি। শেষ পর্যন্ত আমাদের ক্লাব কমিটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সত্যি বলতে কী, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব একটা কঠিন ছিল না।”
দীর্ঘ দিন ধরেই এই দাবিতে সরব ছিলেন অ্যান্ডি মারের মা ও ইংল্যান্ডের প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় জুডি মারে। এবং আমেরিকার প্রাক্তন মহিলা টেনিস খেলোয়াড় বিলি জিন কিং। তাঁদের দাবিকে অবশেষে মান্যতা দিল উইম্বলডন। কিং গত বছর বলেছিলেন, “আমাদের সময়ে শুধু সাদা পরে খেলার অনুমতি ছিল। সব কিছু সাদা পরে খেলতে হত। ঋতুস্রাবের সময় অন্তর্বাস নিয়ে মাথা ঘামাতে হত। সব সময় খেয়াল রাখতে হত, কিছু বোঝা যাচ্ছে না তো? দাগ লাগছে না তো? ওই দিনগুলোতে সারাক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা থাকত।”
এমন সিদ্ধান্তের জন্য এবার থেকে ‘দাগমুক্ত’ হল উইম্বলডন। অল ইংল্যান্ড ক্লাব জানিয়েছে, উইম্বলডন ১৪৬ বছরের গোঁড়ামি কাটিয়ে ফেলেছে। স্বভাবতই বর্তমান যুগের মহিলা খেলোয়াড়দের মুখে একগাল হাসি। ব্রিটিশ খেলোয়াড় হেথার ওয়াটসন বলেছেন, “গত বছর আমাকে ওষুধ খেয়ে নামতে হয়েছিল। কারণ, সাদা পোশাক ছাড়া অন্য কোনও রঙের অন্তর্বাস পরার অনুমতি ছিল না। তবে এবার থেকে অনেক বেশি মুক্তমনে খেলতে পারব।” অস্ট্রেলিয়ার দারিয়া সাভিলের প্রতিক্রিয়া, “কেরিয়ারের শুরুর দিকে সাদা পরে খেলতে ভালো লাগত। তবে এটাও সত্যি যে উইম্বলডন এলে ঋতুস্রাবের কথা ভেবেই আমরা আতঙ্কে থাকতাম। বেশ কয়েকবার ওষুধ খেয়ে আমাকে ঋতুস্রাব পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। তবে এবার থেকে আর সেগুলো ভাবতে হবে না।”
এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য অনেকটা এগিয়ে গেল উইম্বলডন। তবে এটাও সত্যি যে, গোঁড়ামি ভেঙে উইম্বলডনকে ‘দাগমুক্ত’ করতে লেগে গেল দীর্ঘ ১৪৬ বছর। আর তাই মহিলা খেলোয়াড়দের কালো এবং আরও বিভিন্ন গাঢ় রঙের অন্তর্বাস পরে খেলতে দেখা যাচ্ছে। অল ইংল্যান্ড ক্লাবে এই সিদ্ধান্তে খুশি টেনিস তারকাদের অনেকেই।