২০ বছরের ইয়ানিক সিনার কোয়ার্টার ফাইনালে কড়া লড়াইয়ের সামনে ফেলে দিয়েছিলেন নোভাক জোকোভিচকে। রাফায়েল নাদালকেও একই রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করালেন ২৪ বছরের টেলর ফ্রিৎজ। জোকার ফিরে আসতে পেরেছিলেন লড়াইয়ে। নাদালকেও জিততে হল পাঁচ সেট লড়াই করে। ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিটের টান টান লড়াইয়ে নাদালের পক্ষে খেলার ফল ৩-৬, ৭-৫, ৩-৬, ৭-৫, ৭-৬ (১০-৪)।
আমেরিকার তরুণ অবশ্য শুরুটা ভাল করতে পারেননি। তাঁর প্রথম সার্ভিসই ব্রেক করে দেন নাদাল। নিজের সার্ভিস ধরে প্রথম সেটে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যান ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। দেখে মনে হচ্ছিল নাদালের উইম্বলডন সেমিফাইনালে ওঠা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু, ফ্রিৎজ ভেবেছিলেন অন্যরকম। পর পর পাঁচটি গেম জিতে নাদালকেই চমকে দেন তিনি। ষষ্ঠ এবং অষ্টম গেমে নাদালের সার্ভিস ভেঙে ৬-৩ ব্যবধানে সেট জিতে নেন।
৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার পরও ৩-৬ ব্যবধানে সেট খুইয়ে নাদালের চোখেও তখন অবিশ্বাস। সেন্টার কোর্টের দর্শকাসনে বসে থাকা ডেভিড বেকহ্যামের মুখেও বিস্ময়। অবাক হওয়ার বাকি ছিল আরও। দ্বিতীয় সেটে নাদাল ছন্দে ফেরার চেষ্টা করলেও ফ্রিৎজ ছিলেন অদম্য। দ্বিতীয় সেটেও ফ্রিৎজের প্রথম সার্ভিস ব্রেক করেন নাদাল। ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যান প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় বাছাই। একাদশ বাছাই আবারও বুঝিয়ে দিলেন ছেড়ে কথা বলার লোক তিনি নন। পঞ্চম গেমেই নাদালের সার্ভিস ভেঙে লড়াইয়ে ফিরলেন ফ্রিৎজ। শেষ পর্যন্ত নাদাল দ্বিতীয় সেট জিতলেন ৭-৫ ব্যবধানে। দ্বাদশ গেমে নাদাল ভাঙলেন ফ্রিৎজের সার্ভিস। বলা ভাল, একাধিক আনফোর্সড এরর করে আমেরিকার তরুণই সেট তুলে দিলেন নাদালকে।
তৃতীয় সেটের তৃতীয় গেমে নাদালের সার্ভিস ব্রেক করে এগিয়ে যান ১১তম বাছাই। নবম গেমে দ্বিতীয় বার নাদালের সার্ভিস ভেঙে ৬-৩ ব্যবধানে সেট জিতে নেন ফ্রিৎজ। ম্যাচেও এগিয়ে যান ২-১ সেটের ব্যবধানে। চতুর্থ সেটে শুরু থেকেই নবীন-প্রবীণের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখল সেন্টার কোর্ট। নিজের নিজের সার্ভিস ধরে রাখতে হিমসিম খেলেন দু’জনেই। ফ্রিৎজের প্রথম দু’টি সার্ভিস গেম জিতে নেন নাদাল। আবার বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বরের একটি সার্ভিস গেম দখল করেন আমেরিকার তরুণ। অষ্টম গেমেও নাদালের সার্ভিস ভাঙলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ সেট নাদাল জিতলেন ৭-৫ গেমে।
পঞ্চম তথা চূড়ান্ত সেটের শুরু থেকেই দুই প্রতিপক্ষকেই কিছুটা সাবধানী দেখিয়েছে। সপ্তম সেটে তীব্র লড়াইয়ের পর ফ্রিৎজের সার্ভিস ভাঙতে সক্ষম হন নাদাল। কিন্তু পরের সার্ভিস গেমটাই ধরে রাখতে পারলেন না স্প্যানিশ তারকা। শেষ পর্যন্ত সেট গড়াল টাইব্রেকারে। ১০-৪ ব্য়বধানে টাইব্রেকার জিতে ৭-৬ ব্যবধানে সেট এবং ম্যাচ জিতলেন নাদাল। পৌঁছলেন উইম্বলডনের সেমিফাইনালে।
শেষ পর্যন্ত নাদালের অভিজ্ঞতা। ফ্রিৎজের তারুণ্যও বোধহয় হারল না। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার বার্তা দিয়ে রাখল। প্রাক্তন টেনিস তারকা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন, ফ্রিৎজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারেন নাদালকে। উইম্বলডল কোয়ার্টার ফাইনালের আগে টানা আট ম্যাচ জেতা আমেরিকার তরুণ একটাও সেট হারেননি। এ বছরই ইন্ডিয়ান ওয়েলসের ফাইনালে নাদালকে হারিয়েছিলেন। জয়দীপ বলেছিলেন,‘‘সেন্টার কোর্টে খেলতে নামাটা একটা অন্য ব্যাপার। শরীরের থেকেও বেশি মানসিক চাপ বেশি থাকে। যেটা সামলানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে নাদালই।’’