ক্রিকেটবিশ্বে অন্যতম সেরা ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত বীরেন্দ্র সেহওয়াগ ওরফে ‘নজফগড়ের নবাব’৷ যিনি পরে হয়ে উঠেছিলেন ‘মুলতান কা সুলতান’৷

২৯ মার্চ, ২০০৪৷ ১৭ বছর আগে আজকের দিনেই ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক হয়েছিলেন সেহওয়াগ৷ মুলতান টেস্টে পাক বোলারদের পিটিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছিলেন ভারতীয় এই ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান৷ তারপর থেকে নজফগড়ের নবাব হয়ে ওঠেন ‘মুলতান কা সুলতান’৷

১৫ বছর পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়ে দাপট দেখিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা৷ বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা৷ বিশেষ করের ১৭ বছর আগে আজকের দিনটা ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য স্পেশাল৷ মুলতান টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল বীরুর ব্যাটে৷ যার ফলে ইনিংস ও ৫২ রানে মুলতান টেস্ট জিতেছিল ভারত৷

রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধী ভারত মুলতান টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিল৷ সেহওয়াগের সঙ্গে ভারতীয় ইনিংস শুরু করেছিলেন আকাশ চোপড়া৷ পাকিস্তানি বোলিং আক্রমণকে একাই শেষ করে দিয়েছিলেন বীরু৷ ওপেনিং জুটিতে ১৬০ রান তুলেছিল টিম ইন্ডিয়ার৷ যার মাত্র ৪২ রান করেছিলেন চোপড়া৷ বাকিটা সেহওয়াগের৷ দ্বিতীয় উইকেটে ক্যাপ্টেন দ্রাবিড়ের সঙ্গে বীরুর পার্টনারশিপ জমেনি৷ ব্যক্তিগত ৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন ‘দ্য ওয়াল’৷ কিন্তু তারপর সচিন তেন্ডুলকর ও সেহওয়াগের তৃতীয় উইকেটে ৩৩৬ রানের পার্টনারশিপে ম্যাচে আধিপত্য দেখায় ভারত৷

‘নজফগড়ের নবাব’ যখন ‘মুলতান কা সুলতান’

  • প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক বীরেন্দ্র সেহওয়াগ
  • ২৯ মার্চ, ২০০৪ মুলতান টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন বীরু
  • পাক বোলারদের পিটিয়ে ৩৭৫ বলে ৩০৯ রান করেছিলেন সেহওয়াগ
  • এই টেস্টে ১৯৪ রানের অপরাজিত ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর
  • সেহওয়াগ-সচিনের ব্যাটে ইনিংস ও ৫২ মুলতান টেস্ট জিতেছিল ভারত
  • চার বছর পর একই দিনে দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন সেহওয়াগ

  • ২৯ মার্চ, ২০০৮ চিপকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৩১৯ রান করেছিলেন বীরু
  • সেহওয়াগের এই ইনিংস টেস্টে ভারতীয়দের মধ্য ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর
  • বীরু ছাড়া দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি রয়েছে করুণ নায়ারের
  • ব্র্যাডম্যান, লারা, গেইল ছাড়া দু’টি ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক সেহওয়াগ

প্রথম দিন ২২৮ রানের অপরাজিত থাকা সেহওয়াগ দ্বিতীয় দিনেই ইতিহাস গড়েছিলেন৷ মাত্র ৩৭৫ বলে ৩০৯ রানের বীরুর বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন বীর৷ তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল হাফ-ডজন ছক্কা ও ৩৯টি বাউন্ডারিতে৷ তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিলেন লিটল মাস্টার৷ ১৯৪ রানে অপরাজিত ছিলেন সচিন৷ ভারত ইনিংস ডিক্লেয়ার্ড করায় মাত্র ৬ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হয়নি মাস্টার ব্লাস্টারের৷ ৫ উইকেটে ৬৭৫ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার্ড করেছিলেন ভারত৷

ভারতের পাহাড়প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৪০৭ রান তুলেছিল পাকিস্তান৷ অর্থাৎ ফলো-অন বাঁচাতে পারেনি ইনজামাম-উল হকের দল৷ দ্বিতীয় ইনিংসে কিংবদন্তি লেগ-স্পিনার অনিল কুম্বলের সামনে আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তান৷ মাত্রা ২১৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাক ইনিংস৷ ৭২ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে ভারতকে ইনিংসে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন ‘জাম্বো’৷

শুধু তাই নয়, এর চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চেন্নাই টেস্টে এর রিপিট টেলিকাস্ট করেছিলেন বীরু৷ ২৯ মার্চ, ২০০৮৷ চিপকে প্রোটিয়া বোলারদের বিরুদ্ধে ৩১৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন৷ ইনিংসে ৪২টি বাউন্ডারি ও পাঁচটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সেহওয়াগ৷ এটাই ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর৷ পরে দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন করুণ নায়ার৷ ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন করুণ৷ তবে স্যর ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা, ক্রিস গেইল ছাড়া দু’টি ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক সেহওয়াগ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.