হঠাৎ রাজার খেয়াল! কাতার বিশ্বকাপ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে বিপাকে ফিফা, বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা

ফুটবল বিশ্বকাপ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে রাজ নির্দেশ। সেই নির্দেশই বিপাকে ফেলেছে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকদের। চিন্তায় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফাও।

কাতারের রাজ পরিবারের দাবি, বিশ্বকাপের সব স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ করতে হবে মদ বা মদ জাতীয় পানীয়ের বিক্রি। রাজ পরিবারের এই দাবি বা নির্দেশ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয় বিশ্বকাপের আয়োজকদের। তাঁরা বিকল্প পথ খুঁজতে ব্যস্ত। কাতারের রাজ পরিবারের হঠাৎ এমন খেয়ালে মাথায় হাত ফিফা কর্তাদেরও। কারণ বিশ্বকাপের অন্যতম প্রধান স্পনসর একটি বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থা।

রাজ-আজ্ঞা পালন করার জন্য মরিয়া কাতারের আয়োজক কমিটি। স্টেডিয়ামগুলি থেকে বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থার দোকান সরিয়ে দেওয়ার জন্য ফিফার উপর চাপ দিচ্ছেন তাঁরা। প্রতিযোগিতা শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আয়োজকদের এমন অবস্থান বদলে বিস্মিত ফিফা কর্তারা। স্টেডিয়ামগুলোয় বিয়ার বিক্রি করা না গেলে বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ফিফাকে। কারণ, বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থাটিই এ বারের বিশ্বকাপের সব থেকে বড় স্পনসর। কাতারের রাজা নিজে এ নিয়ে কিছু না বললেও তাঁর ভাই শেখ জাসিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল-থানি বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলিতে বিয়ার বিক্রি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তিনি আবার কাতার ফুটবল সংস্থার সভাপতি। রাজ পরিবারের আপত্তির কথা জানার পরেই বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা শহরের সব অস্থায়ী বিয়ারের দোকানগুলি বন্ধ করে দিয়েছে দোহার পুলিশ।

রাজ পরিবারকে রাজি করানো সম্ভব নয় বুঝে ফিফা কর্তারা সংশ্লিষ্ট বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। যদিও সমাধান সূত্র পাওয়া অত্যন্ত কঠিন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগেও রাজ পরিবারের তরফে আপত্তি করা হলেও সরাসরি বিক্রি বন্ধের দাবি জানানো হয়নি। মনে করা হচ্ছে, কাতারের রাজা বা আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির নির্দেশেই সরাসরি বিয়ার বিক্রি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন জাসিম।

বিকল্প হিসাবে স্টেডিয়াম চত্বরের অস্থায়ী বিয়ারের দোকানগুলি এক ধারে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ফিফা। যাতে তুলনামূলক কম মানুষের চোখে পড়ে সেগুলি। একই সঙ্গে সেই জায়গাটি কোনও ভাবে ঢেকে দেওয়া যায় কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও আয়োজকদের তরফে বিশ্বকাপের স্পনসর বিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থা সব অস্থায়ী দোকান সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্টেডিয়ামে বিশেষ অতিথিদের বসার জায়গায় বিয়ার বিক্রি নিয়ে এখনও আপত্তি ওঠেনি। সেখানে বিয়ার পান করতে গেলে প্রতি ম্যাচে খরচ করতে হবে কমপক্ষে ২২ হাজার ৪৫০ ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা।

এত দিন পর্যন্ত ঠিক ছিল স্টেডিয়াম এবং ফ্যান-জ়োনে বিয়ারের অস্থায়ী দোকানগুলি থেকে খেলার শুরুর আগের এবং পরের ৩০ মিনিট বিয়ার বিক্রি করা হবে। স্টেডিয়াম চত্বরের নির্দিষ্ট জায়গায় বিয়ার পান করে গ্যালারিতে প্রবেশ করতে পারবেন ফুটবলপ্রেমীরা। খেলা দেখার টিকিট থাকলে তবেই স্টেডিয়াম চত্বরে বিদেশি নাগরিকেরা বিয়ার কিনতে পারবেন। এক জন চার গ্লাসের বেশি বিয়ার কিনতে পারবেন না। সম্ভাব্য অশান্তি এড়াতেই বিয়ার পানের ক্ষেত্রেও সীমা বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ পরিবারের নতুন দাবিতে সেই ব্যবস্থাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এমনিতে কাতারে মদ বা মদ জাতীয় পানীয় নিষিদ্ধ। রাজধানী দোহার হাতে গোনা কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেলের ভিতর মদ্য পান করার অনুমতি রয়েছে। মূল শহরের আট কিলোমিটার দূরে একটি মাত্র মদের দোকান করেছে। কর্মসূত্রে কাতারে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের কাছে অনুমতি পত্র থাকলে তবেই তাঁরা সেই দোকান থেকে মদ কিনতে পারেন। রাস্তায় বা গাড়িতে বসে মদ্যপান করা যায় না। পান করতে হয় বাড়িতে নিয়ে গিয়ে।

তিন মাস আগে কাতারের অনুরোধে বিশ্বকাপ শুরুর দিন এগিয়ে দিয়েছে ফিফা। ২১ নভেম্বরের বদলে ২০ নভেম্বর কাতার বনাম ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এ বারের ফুটবল বিশ্বকাপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.