আইসিসি-র শীর্ষ পদে কি সৌরভ? বসতে হবে সমর্থন আদায়ের পরীক্ষায়

ভারতীয় বোর্ডের মসনদ হারানোর পরে আইসিসি চেয়ারম্যানের দৌড়েও কি সঙ্কটের মুখে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? আরব সাগরের ধারে যে রকম এলোমেলো হাওয়া বয়ে গেল, তাতে এই প্রশ্ন মোটেও উড়িয়ে দেওয়াযাচ্ছে না।

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, সৌরভের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দু’জনের নাম ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং বোর্ডের প্রাক্তন সর্বময় কর্তা এন শ্রীনিবাসন। এর মধ্যে অনুরাগ অবশ্যই এগিয়ে থাকবেন, যদি বিজেপি নেতৃত্ব এত ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁকে আইসিসিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হয়েও তাঁর নিয়ামক সংস্থার মসনদে বসতে কোনও অসুবিধা নেই।

শ্রীনির জন্য মঙ্গলবার সকাল থেকে জোরালো ভাবে নেমে পড়েছে দক্ষিণী লবি। এমনিতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগের তুলনায় ম্রিয়মান হয়ে পড়লেও তিনি যে বোর্ড রাজনীতিতে অতীত নন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন শ্রীনি। কর্নাটক থেকে ব্রিজেশ পটেলকে সরে যেতে হচ্ছে দেখে রজার বিন্নীকে তাস হিসেবে আনার মগজাস্ত্র তাঁরই। দাক্ষিণাত্য থেকে সেই বিন্নীই নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। গত বার বোর্ড নির্বাচনে একেবারে শেষ মুহূর্তে শ্রীনির প্রার্থী ব্রিজেশ পটেলকে নক-আউট করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সৌরভ। রাউন্ড টু জিতলেন শ্রীনি।

প্রতিদ্বন্দ্বী: দৌড়ে শ্রীনিবাসন এবং অনুরাগ ঠাকুরও। ফাইল চিত্র

একটা সময়ে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে আইসিসি-রও সর্বময় কর্তা ছিলেন শ্রীনি। জামাই গুরুনাথ মায়াপ্পনের আইপিএল বেটিংয়ে অভিযুক্ত হওয়া, দেশ জুড়ে পদত্যাগের দাবি, ‘মিডিয়া ট্রায়াল’— সব মিলিয়ে সীমাহীন চাপের মুখে দু’জায়গা থেকেই উৎখাত হন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স দায়িত্ব নেয় বোর্ড পরিচালনার। ও দিকে, আইসিসি মসনদ ছিনিয়ে নেন শশাঙ্ক মনোহর। পুরনো সেই অপমান ভুলতে পারেননি শ্রীনি। তাই আর এক বার আইসিসিতে ফিরে গিয়ে মনোহরকে ‘শিক্ষা’ দিতে চান। শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তিনি সহজে ছাড়ার পাত্র নন।

সৌরভ— তাঁর সম্ভাবনা কতটা? বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদ হারানোর পরে প্রাক্তন অধিনায়কের অতি বড় শুভানুধ্যায়ীও খুব আশাবাদী হতে পারছেন না। এমনিতে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আইসিসি চেয়ারম্যান স্বাধীন ব্যক্তি। আগের মতো আর বোর্ড মনোনীত প্রার্থী হতে হয় না। যার অর্থ, সৌরভ যদি মনে করেন তিনি আইসিসি নির্বাচনে লড়বেন, অন্যান্য দেশের সমর্থন সংগ্রহ করে ভোটে লড়তেই পারেন। কিন্তু কে না জানেন, নিয়ম যা-ই বলুক না কেন, নেপথ্যে ভারতীয় বোর্ড এবং রাজনীতির শীর্ষ নেতাদের সমর্থন না থাকলে কারও পক্ষে আইসিসি চেয়ারম্যানের পদের জন্য লড়া সম্ভব নয়। মঙ্গলবার রাত থেকে তাই কৌতূহল তৈরি হয়েছে, সৌরভ কি বিজেপি হাইকম্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন? তবে কথা বললেও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ব্যাপারে ‘প্রতিশ্রুতি’ দেওয়ার আশা কম। রাজনীতির ময়দানে না আসার সিদ্ধান্ত পাল্টানোরভাবনা নেই সৌরভের।

ভারতীয় বোর্ড কর্তদের দু’টি সিদ্ধান্ত নিতে হবে আইসিসির ব্যাপারে। এক, নিয়ামক সংস্থায় বোর্ডের প্রতিনিধি কে হবেন? যা শুনে এক বোর্ড কর্তা এ দিন হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘এটা কোনও প্রশ্ন হল? জয় শাহ থাকতে আর কারও নাম উঠতে পারে?’’ সৌরভ বোর্ড থেকে সরে যাওয়ায় এখন থেকে সচিব জয়ের আইসিসিতে যাওয়া কার্যত নিশ্চিত। দ্বিতীয়ত, আইসিসি নির্বাচনে কাকে সমর্থন করা হবে? যদি অনুরাগ ঠাকুরকে ছাড়পত্র দিয়েই দেন বিজেপি হাইকম্যান্ড, তা হলে প্রথম প্রশ্নটির মতোই এর জবাব খোঁজাও সময়ের অপচয়। আর যদি ক্রিকেটার হিসেবে বহু বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন ঘটানোর মতোই সৌরভ ফের ভেসে উঠতে পারেন, তা হলে নাটক জমবে। শ্রীনিও সহজে ‘ম্যাচ’ ছাড়বেন না। বোর্ডের প্রভাবশালী কর্তাদের কথা মানলে, আইসিসি চেয়ারম্যানের পদে এই ত্রিমুখী লড়াইয়ে পর-পর তিন জনের নাম এ ভাবে থাকা উচিত— ১) অনুরাগ ঠাকুর, ২) এন শ্রীনিবাসন, ৩) সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

ওয়াকিবহাল মহল আরও একটি সম্ভাবনার কথা বলছে। বর্তমান চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলের দু’বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে চেয়ারম্যান পদে তিনি আরও দু’টি মেয়াদের জন্য থাকতে পারেন (সর্বোচ্চ ছ’বছর)। এ বারেই সর্বোচ্চ পদের জন্য না-ও লড়তে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সময় নিতে পারে আরও দু’বছর। তখন সৌরভের পরিবর্তে অন্য কারও নাম ভাবা হতে পারে। বোর্ড মহলে ফিসফাস, ‘কারও নাম’ বলতে অমিত-পুত্রের নাম। এই পর্যবেক্ষণ সত্যি হলে লিখে ফেলতে হবে ১১ অক্টোবর, ২০২২, আরব সাগরের পারে শুধু বোর্ড থেকে নয়, ক্রিকেট প্রশাসন থেকেই অস্তাচলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.