আইপিএলের মিনি নিলামে মোট সাতজনকে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। সেই সাতজনকে নিয়ে কেকেআর কী নিজের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারল? তারপরও কী কী সমস্যা থাকল, তা দেখে নিন –
কলকাতা নাইট রাইডার্সের পুরো স্কোয়াড
রিটেনড খেলোয়াড়: শ্রেয়স আইয়ার (অধিনায়ক), বেঙ্কটেশ আইয়ার, নীতীশ রানা, আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, রিঙ্কু সিং, টিম সাউদি, অনুকূল রানা, হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী, উমেশ যাদব।
ট্রেড: রহমানউল্লাহ গুরবাজ, শার্দুল ঠাকুর, এবং লকি ফার্গুসন।
মিনি নিলামে কাকে কাকে নিয়েছে কেকেআর? এন জগদীশন (৯০ লাখ টাকা), বৈভব অরোরা (৬০ লাখ টাকা), সুয়েশ শর্মা (২০ লাখ টাকা), কুলবন্ত খেজরোলিয়া (২০ লাখ টাকা), লিটন দাস (৫০ লাখ টাকা), ডেভিড ওয়াইজ (১ কোটি টাকা) মনদীপ সিং (৫০ লাখ টাকা) এবং শাকিব আল হাসান (১.৫ কোটি টাকা)।
মিনি নিলামে কেমন পারফরম্যান্স কেকেআরের?
১) মিনি নিলামে ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটারের প্রয়োজন ছিল কেকেআরের। ৯০ লাখ টাকায় জগদীশনকে পেয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পেরেছে নাইটরা। যিনি সম্প্রতি দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। বিজয় হাজারে ট্রফিতে পরপর শতরান হাঁকিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। রঞ্জি ট্রফিতেও ছন্দে আছেন। বেঙ্কটেশ আইয়ারের সঙ্গে তাঁকে ওপেনিংয়ে ব্যবহার করতে পারবে কেকেআর। সেক্ষেত্রে বাড়তি এক বিদেশি খেলানোর সুযোগও মিলবে। কারণ জগদীশন ছাড়া কেকেআরের বাকি দুই উইকেটকিপারই হলেন বিদেশি (লিটন ও গুরবাজ)।
২) স্পিনিং অল-রাউন্ডার ঠিক তেমনও প্রয়োজন ছিল না কেকেআরের। কিন্তু শাকিবকে পেয়ে যাওয়ায় কেকেআরের পুরো খেলার ধরনই পালটে যাবে। বাংলাদেশের তারকাকে পেয়ে যাওয়ায় একজন বাড়তি বোলার বা ব্যাটার খেলানোর সুযোগ চলে এসেছে কেকেআরের সামনে। শাকিব তো চার ওভার করবেনই। সঙ্গে প্রতি ম্যাচে রানও করে দেবেন। একেবারে শেষে নেওয়া হলেও এবার নিলামে কেকেআরের সেটাই সেরা চাল।
৩) লিটন দাস সম্ভবত প্রথম একাদশে তেমন সুযোগ পাবেন না। কিন্তু তিনি যে টপ-অর্ডারে কতটা বিস্ফোরক হতে পারেন, সেই প্রমাণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে দেখিয়েছেন লিটন। ফলে তাঁকে ৫০ লাখ টাকায় পেয়ে ব্যাক-আপ উইকেটকিপারের থেকে একটু বেশিই কিছু পেয়ে গিয়েছে কেকেআর।
৪) ভারতীয় পেসারের দরকার ছিল কেকেআরের। সেক্ষেত্রে কেকেআরের যে চাহিদা যে মিটেছে, এমন মোটেও নয়। বৈভব আরোরাকে যে মূলত সুইং বোলার হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক নায়ার। কুলবন্ত খেজরোলিয়াকে নেওয়া হলেও তিনি মূলত ব্যাক-আপ হতে চলেছেন। ফলে ডেথে কে বল বল করবেন, নিলামে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায়নি কেকেআর।
৫) দিল্লির তরুণ লেগস্পিনারকে সুয়েশ শর্মাকে অনেকটা ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ হিসেবে নিয়েছে কেকেআর। সম্প্রতি বরুণ এতটাই খারাপ ফর্মে আছেন যে সুয়েশকে প্রথম একাদশে রেখে দিতে পারে নাইট ব্রিগেড।
৬) মনদীপ সিংকে নেওয়া হলেও আদৌও প্রথম একাদশে থাকবেন কিনা, তা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন আছে। একেবারেই ব্যাক-আপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
৭) চোটপ্রবণ রাসেলের বিকল্পের প্রয়োজন ছিল কেকেআরের। মিনি নিলামে সস্তায় সেই ভূমিকায় ওয়াইজকে নিয়েছে নাইট বাহিনী। পুরোপুরি রাসেল না হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকার কিছুটা চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। অর্থাৎ রাসেল চোট পেলেও একেবারে হা-হুতাশ করতে হবে না কেকেআরকে।
নিলামের পরও একাধিক প্রশ্ন থাকল কেকেআরের
১) ডেথে কে বোলিং করবেন? উমেশকে পাওয়ার প্লে’কে ব্যবহার করে কেকেআর। সাউদিও যেহেতু সুইং বোলার, তাই তাঁকে শুরুর দিকে ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ডেথে বোলিংয়ের জন্য সাউদিকে মেরেকেটে দু’ওভার করাতে পারবে কেকেআর। বাকি দু’ওভার করার জন্য কেকেআরের হাতে শার্দুল ছাড়া সেই অর্থে কোনও পেস বোলিং বিকল্প নেই। যা চিন্তায় রাখবে কেকেআরকে।
২) উপযুক্ত ব্যাক-আপ খেলোয়াড় নেই কেকেআরের হাতে। বেঙ্কটেশ, নীতীশের মতো খেলোয়াড়রা যদি ফ্লপ হন, তাহলে বিকল্প কে হবেন, তা নিয়ে কেকেআরের কাছে কোনও উত্তর নেই। নীতীশ সম্প্রতি একেবারেই ছন্দে নেই। সেটাও চিন্তায় রাখবে কেকেআরকে।
৩) কেকেআরের হাতে মাত্র একজন ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটার আছেন। জগদীশন যদি কোনও কারণে সাফল্য না পান, তাহলে বিদেশিদের দিকে ঝুঁকতে হবে কেকেআরকে। সেক্ষেত্রে দলের পুরো কম্বিনেশন পুরো পালটে যাবে। কারণ প্রথম একাদশে সর্বোচ্চ চার বিদেশি থাকতে পারেন।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের সম্ভাব্য প্রথম একাদশ
বেঙ্কটেশ আইয়ার, এন জগদীশন, নীতীশ রানা, শ্রেয়স আইয়ার, রিঙ্কু সিং, শাকিব আল হাসান, আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, সুয়েশ শর্মা/বরুণ চক্রবর্তী/অনুকূল রায়/শার্দুল ঠাকুর/বৈভব অরোরা, টিম সাউদি, উমেশ যাদব।
সুয়েশ শর্মা/বরুণ চক্রবর্তী/অনুকূল রায়/শার্দুল ঠাকুর/বৈভব অরোরা কেন?
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা যেমন প্রথম একাদশ বেছে নিয়েছে, কেকেআর যদি সেই ১১ জনকে নামায়, তাহলে নাইটদের হাতে দু’জন পুরোপুরি পেসার আছেন। সেইসঙ্গে রাসেল এবং বেঙ্কটেশও পেস বল করতে পারেন। আবার স্পিনার হিসেবে আট ওভার বল করতে পারবেন নারিন ও শাকিব। তার ফলে পিচের ভিত্তিতে কেকেআর সিদ্ধান্ত নেবে যে কোন সুয়েশ, বরুণ, অনুকূল, শার্দুল এবং বৈভবের মধ্যে কে খেলবেন।
যদি স্পিনিং পিচ হয়, তাহলে অনামী লেগস্পিনার সুয়েশকে নিতে পারে কেকেআর। সেক্ষেত্রে দৌড়ে বরুণও থাকবেন। কারণ রহস্য স্পিনারদের প্রতি নাইটদের বরাবরই একটু বেশি প্রীতি আছে (যদিও বরুণের রহস্য এখন বঙ্গোপসাগরে গিয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর)। আবার যদিও স্পিনার-অলরাউন্ডার চায় কেকেআর, সেক্ষেত্রে অনুকূলকে বেছে নেবে। একইভাবে পেসার-অলরাউন্ডার চাইলে শার্দুলকে নিতে পারে কেকেআর। সেক্ষেত্রে ডেথের বোলারও থাকবেন। আবার যদি কেকেআর ম্যানেজমেন্ট মনে করে যে বল প্রথমে বেশি সুইং করবে, সেক্ষেত্রে বৈভবকে নিতে পারে।