বৃহস্পতিবারই অস্ট্রেলিয়া বেরিয়ে পড়ল ভারতীয় দল। পার্থ এবং ব্রিসবেনে চলবে বিশেষ মহড়া। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা কি পারবেন ২০১১-র পর থেকে অধরা বিশ্বকাপ জিতে ফিরতে? যশপ্রীত বুমরার ছিটকে যাওয়া কতটা বড় ধাক্কা? কে পূরণ করবেন বুমরার অভাব? শক্তিশালী ব্যাটিং কি পারবে মোক্ষম সময়ে জ্বলে উঠতে? শেষের ওভারগুলিতে স্নায়ু ধরে রাখতে পারবেন চাপে থাকা ভুবেনেশ্বর কুমার, হর্ষল পটেল-রা? সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বোর্ড প্রেসিডেন্ট যথেষ্টই আশাবাদী কাপ অভিযান নিয়ে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে যশপ্রীত বুমরা নেই। কী বলবেন?
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: বড় ধাক্কা। খুবই বড় ধাক্কা তো বটেই। সব ধরনের ক্রিকেটেই বুমরা কত বড় ম্যাচউইনার, তা তো সবাই দেখেছে।
প্র: দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে একটাই প্রশ্ন। ভারত কি পারবে বিশ্বকাপ জিততে? বোর্ড প্রেসিডেন্ট ট্রফি জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
সৌরভ: খুবই আশাবাদী। আমাদের দলে কত দারুণ সব প্রতিভা রয়েছে! তাই কে না আশাবাদী হবে! এখন পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে, মাঠে নেমে এই প্রতিভার সঠিক প্রতিফলন ঘটানো। আমাদের দলের দক্ষতা নিয়ে কোনও সন্দেহই থাকতে পারে না, বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটার রয়েছে। কিন্তু দিনের শেষে সব কিছু নির্ভর করে ওই একটা জিনিসের উপরে। মাঠে নেমে সেই যোগ্যতার ছাপ কতটা রাখতে পারলাম।
প্র: বিশ্বকাপের মতো মঞ্চ কি আরও বেশি করে বাস্তব ফল-নির্ভর? কাগজকলমে যত বড়ই দেখাক না কেন, দক্ষতা কতটা কী বাস্তবায়িত করা গেল, সেটাই আসল?
সৌরভ: একদমই তাই। বিশ্বকাপের মতো বড় প্রতিযোগিতায় প্রত্যেকটা দিন এই পরীক্ষাটা দিয়ে যেতে হয়। যেটা বললাম, প্রতিভা বা দক্ষতার বাস্তবে ফুটিয়ে তোলার পরীক্ষা। আর একটা জিনিস আমার মনে হয়, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে বড় রান করতে হয়। রান স্কোরিংয়ের উপরে নির্ভর করে দলগুলির বিশ্বকাপ ভাগ্য।
প্র: কিন্তু এখন তো বেশি কথা হচ্ছে ভারতের বোলিং নিয়ে। তার উপরে বুমরার না থাকা। সব মিলিয়ে বেশ চাপে ভারতীয় বোলিং।
সৌরভ: বুমরার না থাকা নিশ্চয়ই ধাক্কা। কিন্তু ওর জায়গায় যে-ই যাক.. মহম্মদ শামি বা অন্য কেউ, সে-ও খারাপ হবে না। ভারতের ফাস্ট বোলিংয়ে এখন অনেক গভীরতা তৈরি হয়ে গিয়েছে, তাই প্রচুর বিকল্পও রয়েছে। শামির অভিজ্ঞতা রয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছে অনেক, সাফল্যও রয়েছে। নির্বাচকেরা ঠিক করবেন, টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করবে বুমরার বিকল্প কে হবে। আমি আরও একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। ১৯৯২-এর বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। প্রতিযোগিতা শুরুর ঠিক আগে চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছিল ওয়াকার ইউনিস। তাই সকলে যদি ভাল খেলতে পারে, তা হলে বুমরার অভাব নিশ্চয়ই ঢেকে দেওয়া সম্ভব।
প্র: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০০১-এর সেই ঐতিহাসিক সিরিজ়। স্টিভ ওয়ের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে ছিটকে গেলেন অনিল কুম্বলে!
সৌরভ: বোলিংয়ে প্রায় কেউ-ই ছিল না। ধাক্কা তো বটেই। কিন্তু শুধু ধাক্কা ভেবে বসে থাকলে তো চলবে না। যা হাতে আছে তাই নিয়েই বিশ্বাস রেখে এগোতে হবে। তা ছাড়া আমি মনে করি, এক জন খেলোয়াড় কখনও বিশ্বকাপ জেতাতে পারে না। এটা টিম স্পোর্ট, তাই দলগত ভাবে ভাল খেলতে হয়। তবেই ট্রফি জেতা যায়। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে তো সকলে ভাল না করলে আরওই জেতা সম্ভব নয়। বুমরা যদি থাকতও আর দারুণ বোলিং করত আর বাকি দশ জন ভাল না খেলত, তা হলে বিশ্বকাপ জেতা যেত না। কিন্তু বুমরা না থেকেও যদি সকলে ভাল খেলে, বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব।
প্র: ডেথ ওভার (শেষের ওভারের) বোলিং নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্বকাপে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব?
সৌরভ: আমি নিশ্চিত, ওরা ভাল করবে। একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে যে, অস্ট্রেলিয়ায় উইকেট অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন হবে। ভারতে ডেথ ওভার বোলিং আর অস্ট্রেলিয়ায় ডেথ ওভার বোলিংয়ের মধ্যে তফাত রয়েছে। এই যে ভারতের বোলিং নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তো আমরাও তো রানটা চেজ় করে দিচ্ছি। তার মানে প্রতিপক্ষের বোলারদেরও তো একই অবস্থা। তারাও ঠিক মতো বল করতে পারছে না। এটা হচ্ছে কারণ ভারতীয় পরিবেশে সফল হওয়া ফাস্ট বোলারদের পক্ষে মোটেও সহজ নয়। এরাই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে যখন বল করবে, অন্য রকম দেখাবে।
প্র: ভারতের ব্যাটিং দেখে কী মনে হচ্ছে? কে এল রাহুলের মিশ্র ফর্ম গিয়েছে। কোহলি রানে ফিরেছেন, রোহিতও রান করলেন।
সৌরভ: আবার বলব, সব কিছু নির্ভর করবে মাঠে নেমে প্রতিভা কতটা কাজে লাগাতে পারলাম, তার উপরে। যে দলের ব্যাটিং লাইন-আপে রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থ-রা রয়েছে, তাদের শক্তি বা দক্ষতা নিয়ে সংশয় থাকার কোনও জায়গাই নেই। এমন প্রতিভার গভীরতা আর কোন দলে রয়েছে? কিন্তু আসল হচ্ছে, প্রতিযোগিতায় কেমন খেলতে পারলাম।
প্র: দলের তরুণ ব্রিগেড নিয়ে কী বলবেন?
সৌরভ: ওরা প্রত্যেকে খুব ভাল ফর্মে রয়েছে। এটা শক্তি বাড়াচ্ছে দলের। সূর্যকুমার যাদব দারুণ ফর্মে রয়েছে। হার্দিক চোট থেকে সেরে উঠে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে। আইপিএল থেকে ভাল খেলছে। সকলে চাইবে, বিশ্বকাপেও এমনই ছন্দে থাকুক সূর্য, হার্দিকেরা।
প্র: পন্থ না কার্তিক, কাকে খেলানো উচিত তা নিয়েও তর্ক চলছে। আপনার ভোট কোন দিকে?
সৌরভ: এটা নিয়ে আমি বলতে চাই না। কোচ, ক্যাপ্টেন ঠিক করবে কাকে খেলানো উচিত।