অনুশীলনে নেই মেসি, গরহাজির আরও এক তারকা, কারণ কি শুধুই বিশ্রাম? বাড়ছে রহস্য

লিয়োনেল মেসি ও অ্যাঙ্খেল দি’মারিয়া কি তবে সুস্থ নন? নাকি তরতাজা অবস্থায় বিশ্বকাপে নামবেন বলে বিশ্রাম নিচ্ছেন? শুক্রবার সন্ধ্যায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর মাঠে দুই তারকাকে ছাড়াই আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি অনুশীলনে নেমে পড়ায় রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলেও অনুশীলন করেননি মেসি। কিন্তু সতীর্থদের সঙ্গে মাঠে এসে কয়েক পাক হেঁটেছিলেন। এ দিন কিন্তু দেখাই গেল না তাঁকে।

বিশ্বকাপের জন্য সরকারি ভাবে দোহায় শুক্রবারই স্থানীয় সময় সন্ধে ৬টা থেকে ছিল আর্জেন্টিনা দলের প্রথম অনুশীলন। বিকেল ৪টে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেন স্কালোনির সহকারীরা। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট বল সাজিয়ে রাখেন তাঁরা। ভিড় করতে শুরু করেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা মেসি…মেসি…গান গাইছিলেন। রীতিমতো উৎসবের আবহ। পাঁচটা পনেরো নাগাদ স্কালোনির সহকারীরা মাঠের ভিতরে ঢুকেই চিন্তিত মুখে বেরিয়ে গেলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হল জল দেওয়া। আর্জেন্টিনা টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য বলছিলেন, ‘‘এই শক্ত মাঠে অনুশীলন করলে ফুটবলারদের চোট লাগার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জল দেওয়া হচ্ছে যাতে মাটিটা একটু নরম হয়। মেসিরা টানা ম্যাচ খেলে ক্লান্ত। ওঁদের সুরক্ষার কথা ভেবেই জল দিতে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ ৬টা বাজতে মিনিট দশেক আগে স্কালোনি মাঠে নামলেন। পিছনে পিছনে পাওলো দিবালারা। মেসি-ভক্ত বছর সাতেকের কার্লাকে নিয়ে মাঠে এসেছিলেন কাতারে কর্মরত আর্জেন্টিনা দূতাবাসের এক কর্মী। মেয়েকে তিনি বলছিলেন, ‘‘ওই দেখো, আর্জেন্টিনার কোচ মাঠে। এ বার আসবেন মেসি।’’ কিন্তু যাঁর জন্য এত আয়োজন, তিনিই তো এলেন না শেষ পর্যন্ত। ছোট্ট কার্লার মুখ ভার। পকেট থেকে চকলেট বার করে মেয়ের মানভঞ্জনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন বাবা। তাঁর মুখেও মেসিকে দেখতে না পাওয়ার হতাশা। তবুও মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন, ‘‘মেসি নিশ্চয়ই নামবেন। হয়তো এখনও তৈরি হচ্ছেন। এই কারণেই দেরি হচ্ছে।’’

অপেক্ষাই সার, মেসি এলেন না। ছোট্ট কার্লার দু’চোখ ছলছল করে উঠল। শেষ পর্যন্ত মেয়েকে কোলে নিয়ে বেরিয়েই গেলেন বাবা। একই রকম মনের অবস্থা নিরাপত্তারক্ষী উসমানের। আর্জেন্টিনা দল যে মাঠে অনুশীলন করছে, তারই প্রবেশদ্বারে গত দু’দিন ধরে কর্মরত বছর বাইশের উসমান। চব্বিশ ঘণ্টা আগেই মেসিকে দেখেছিলেন একদম সামনে থেকে। কিংবদন্তিতে দেখে এতটাই বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন যে, ছবি তুলতেই ভুলে গিয়েছিলেন। উসমান বলছিলেন, ‘‘মেসিকে এত সামনে দেখে কেমন যেন ঘোর লেগে গিয়েছিল আমার। মনেই আসেনি নিজস্বী তোলার কথা। পরে খুব আফসোস হচ্ছিল। আমি ঠিক করেই রেখেছিলাম, আজ দেখা হলে এই সুযোগ আর হাতছাড়া করব না। মেসির কাছে একটা জার্সিও চাইব। ভাবিনি যে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক অনুশীলনই করবেন না।’’

প্রশ্ন উঠছে মেসি, দি’মারিয়া কেন অনুশীলন করলেন না? ছিলেন না লিসান্দ্রো মার্তিনেসও। কোথায় চোট দুই তারকার? ২২ নভেম্বর সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে কি আদৌ খেলতে পারবেন তাঁরা? আর্জেন্টিনার টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পরে রহস্য আরও বেড়ে গিয়েছে। এক জন বললেন, ‘‘মেসির কোনও সমস্যা নেই। ও সম্পূর্ণ সুস্থ। ক্লান্ত বলে বিশ্রাম নিচ্ছেন।’’ কয়েক মিনিট পরে আর এক জনকে একই প্রশ্ন করায় তিনি বললেন, ‘‘মেসি অনুশীলন করছেন তো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমে। শনিবার থেকে হয়তো মাঠে নামবেন।’’ দি’মারিয়া ও লিসান্দ্রোর কী সমস্যা? হঠাৎই ব্যস্ততা বেড়ে গেল আর্জেন্টিনা টিম ম্যানেজমেন্টের সেই সদস্যের। বললেন, ‘‘সব ঠিক আছে। আমাদের দলে কোনও সমস্যা নেই। এখন একটু ব্যস্ত রয়েছি, পরে কথা হবে।’’

আবু ধাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে কাতারে পা দিয়েই ধাক্কা খেয়েছেন স্কালোনি। কাতার বিশ্বকাপ শুরুর মুখে ফের বড় ধাক্কা আর্জেন্টিনা শিবিরে। চোটে পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন নিকোলাস গন্সালেস ও হোয়াকিম কোরেয়া। তাঁদের শূন্যস্থান পূর্ণ করার জন্য দ্রুত অ্যাঙ্খেল কোরেয়া ও থিয়াগো আলমাদাকে দলে ডেকেছেন স্কালোনি। মেসি যদি সত্যিই চোটের কারণে মাঠে না নামতে পারেন, তাঁর অভাব কী ভাবে পূরণ করবেন আর্জেন্টিনার কোচ?

শুক্রবার সন্ধ্যায় স্কালোনির শরীরীভাষাই বলে দিচ্ছিল, একেবারেই স্বস্তিতে নেই তিনি। মনের মধ্যে যেন ঝড় বয়ে চলেছে। ফিটনেস ট্রেনারের কাছে দিবালারা যখন ওয়ার্মআপ করছিলেন, চিন্তিত মুখে মাঠের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ। কখনও উদাসীন ভাবে সামনে পড়ে থাকা বলে একটা হালকা শট নিলেন। কখনও আবার শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। মেসি মাঠে না ফেরা পর্যন্ত যে স্বস্তি ফিরবে না স্কালোনির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.